বিএনএ, ঢাকা : আজ চৈত্র মাসের ৩০ তারিখ অর্থাৎ বাংলা ১৪৩১ সনের শেষ দিন। চৈত্রের শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। আগামীকাল সোমবার পহেলা বৈশাখ, নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩২। পাহাড় থেকে সমতল দেশের সব জায়গায় তাই উৎসবমুখর পরিবেশ।
বিশেষত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চৈত্রসংক্রান্তিতে বেশ কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। অনেকে এ দিনে আঙিনায় বা ঘরের বারান্দায় মাঙ্গলিক আলপনা আঁকেন। শাস্ত্রীয় বিধান ও লোকাচার অনুসারে, এদিনে স্নান, উপবাস, দান, ব্রত পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি এবং পুণ্য অর্জনের বিশ্বাস রয়েছে।
খাবারেও বিশেষত্ব রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তিতে। লোকজ রীতিতে দিনের খাবারে থাকত তিক্ত স্বাদের শাক, যেগুলো সংগ্রহ করা হতো বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় বা ভিটেবাড়ি থেকে। সাত কিংবা এগারো ধরনের তিক্ত শাক একসঙ্গে রান্না করে তৈরি করা হতো একটি বিশেষ পদ, যা শুধু স্বাদে নয়, গ্রীষ্মকালীন রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক বলে বিশ্বাস করা হতো। আজকের শহুরে জীবনে এই ঐতিহ্য অনেকটাই বিলুপ্তির পথে, কারণ এসব ঔষধিগুণসম্পন্ন গাছগাছড়া এখন দুর্লভ।
চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে বাঙালি মিলিত হবে পহেলা বৈশাখের সর্বজনীন উৎসবে। জরাজীর্ণতা, ক্লেশ ও বেদনার সবকিছুকে বিদায় জানানোর পাশাপাশি সব অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার থাকবে গোটা জাতির।
শত শত বছর ধরে ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে ‘হালখাতা’ একটি পবিত্র খতিয়ান। সারা বছরের লাভ-লোকসান, দেনা-পাওনা, জমা-খরচের খতিয়ান। এখান থেকে শুরু নতুন বছরের। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাকে পবিত্র মনে করে সযত্নে প্রার্থনায় লালন করে। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান। বাঙালির ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এই ‘হালখাতা। সমাজের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব পালনে আড়ম্বরতায় ভাটা পড়লেও তা আপন ঐতিহ্যে এখনো টিকে আছে। রাজধানী ঢাকার তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার ও শাঁখারি বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এই ঐতিহ্য এখনো ধরে রাখতে স্বল্পপরিসরে ‘হালখাতা’ করে থাকেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আগেই জানিয়েছিলেন, এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজন হবে সর্বজনীন। আর তাই এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজনও দুই দিন, যার শুরুটা আজকের চৈত্রসংক্রান্তির দিনে। তবে ১২টি জেলায় চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখী সাধুমেলার আয়োজন শুরু হয়েছে শনিবার থেকেই।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে আজ রোবাবার বেলা ১২টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হয়েছে ‘ব্যান্ড শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।’ অনুষ্ঠানে ব্যান্ডসংগীত পরিবেশন করবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, এভোয়েড রাফা, দলছুট, লালন, আর্টসেল, স্টোনফ্রি, মারমা সম্প্রদায়ের ব্যান্ডদল চিম্বুক, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ব্যান্ডদল ইমাং, চাকমা সম্প্রদায়ের ব্যান্ডদল ইনভোকেশন, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ব্যান্ডদল ইউনিটি এবং গারো সম্প্রদায়ের ব্যান্ডদল এফ মাইনর। অনুষ্ঠানে ৫০ জন ঢাকঢোলবাদক এবং ৫০ জন লাঠিখেলা শিল্পীও অংশগ্রহণ করবেন। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ আয়োজন।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।/শাম্মী