বিএনএ, ববি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ক্যাম্পাস জুড়ে লালের সমারোহ, পাতাহীন ডালে ডালে ফুটে থাকা রক্ত লাল পলাশ প্রকৃতিকে নতুন এক রূপে সাজিয়েছে। ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ, শেখ হাসিনা হল রাস্তা, কেন্দ্রীয় মাঠের রাস্তার দু’ধারের রাস্তাজুড়ে সারি সারি গাছে পলাশফুল বাহারি আভা ছড়াচ্ছে। পলাশ ফুলের এই আভাস শিক্ষার্থীদের মন ছুয়ে যায় বিকাল হলেই দেখা মেলে প্রকৃতিপ্রেমীদের পলাশের রূপে বিমোহিত তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পলাশ ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ববি প্রতিনিধি মো. রবিউল ইসলাম।
পলাশ সজ্জিত অপরূপ ববি ক্যাম্পাস
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ ৷ আমরা সবাই জানি পৃথিবীর আর কোনো দেশেই ছয়টি ঋতু নেই । আর এদিক বিবেচনায় বলা যায় আমরা বাঙালি হিসেবে আশীর্বাদপুষ্ট । শীতকে বিদায় দিয়ে এখন প্রকৃতিতে বিরাজ করছে ঋতুরাজ বসন্ত । এই ঋতুরাজের বৈচিত্র্য দেখা দিয়েছে আমাদের ক্যাম্পাসেও । মুক্তমঞ্ছ,খেলার মাঠ সহ ক্যাম্পাসের আরও বিভিন্ন জায়গায় পলাশ ফুল ফুটে আমাদেরকে বসন্তের আবির্ভাব সম্পর্কে জানান দিচ্ছে । গাছে গাছে ফুটে থাকা অরুণরাঙা পলাশ ফুলগুলো দেখে মুগ্ধ হবেনা এমন মানুষ নেই । শিশু থেকে প্রবীণ সকলেই ক্যাম্পাসে আসছে এই পলাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে । এই অপরূপ দৃশ্যকে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে ক্যামেরা বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছেনও অনেকে । বিকালবেলা ক্যাম্পাসের এরূপ দৃশ্যতে মনে হয় যেনো প্রকৃতির সাথে মানুষের এক মিলনমেলা তৈরি হয়েছে এখানে । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অনেকেই গাছের ডাল ভেঙে,ফুল ছিড়ে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করেন । পরিশেষে, সকলকেই মনে রাখা উচিৎ ফুল গাছেই সুন্দর । তাই দূর থেকে উপভোগ করুন, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বজায় রাখুন ।
ফাতেমা তুজ জোহরা মাইসা, বাংলা বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
“”ববিতে পলাশের আগমন “”
শীতের প্রস্থান এবং বসন্তের আগমনের সাথে সাথেই আগমন ঘটে পলাশ নামক একটি সুন্দরী পুষ্পের। যার হৃদয় ভোলানো সৌন্দর্য দোলা দেয় প্রতিটি মানুষের মনে। পলাশ ফুল বিভিন্ন নামে পরিচিত। সংস্কৃতিতে এই ফুলটিকে ‘কিংশুক ‘ নামে অভিহিত করা হয়। এই ফুলটি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ,নেপাল, ভুটান ইত্যাদি) বসন্তকালে দেখা যায়।
দক্ষিণবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যেকটি ঋতুতে নব রূপে প্রকাশিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি শরতের কাশফুলের জন্য বহুল পরিচিত । কিন্তু শরতের পর থেকে বেশি যে ঋতুতে এ বিদ্যাপীঠ নিজেকে বেশি সজ্জিত করে সেটি হচ্ছে বসন্ত। আর এ বসন্তে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি রাস্তায় ফুটন্ত পলাশের চোখ ধাঁধানো কমলা বর্ণ ববি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। নব যৌবন লাভ করে ববির মাটি। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মাঝে মাঝে মনে হয় যেন শুকনো বৃক্ষ মাথায় আগুন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ববি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যের জীবনে বসন্তের পলাশ ফুল হৃদয়ে আনন্দ সঞ্চারিত করে। নব রূপে উজ্জীবিত হয় প্রিয় বিদ্যাপীঠ।
অমরেশচন্দ্র মন্ডল।
বাংলা বিভাগ ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
মায়াবী পলাশে রিঙন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
❝পলাশের শত শত ওই লাল পাঁপড়িতে
স্নিগ্ধতার ছোঁয়া লাগে সোনালী প্রভাতে
ফাগুনের জোয়ার যেন আজ নগরীতে
কলতান মুখরিত আঙিনা পাখ-পাখালিতে। ❞
পলাশ ফুল বসন্ত ও ফাল্গুনের পরিচয়বাহী বাঙালির ফুল। যার আরেক নাম ‘অরণ্যের অগ্নিশিখা’। প্রকৃতিকে নবরূপে লাল-কমলার প্রাণঢালা স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে তোলে ‘পলাশ’।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা মুখরিত হয়েছে বসন্তের রক্তিম পলাশের ছোঁয়ায়। শীতের পাতা ঝরা দিনের শেষে সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে পলাশ ফুল এসেছে সকলের কাছে আনন্দ ও প্রেরণার বাণী নিয়ে। প্রকৃতি ও নারী উভয়ই সৌন্দর্যের প্রতীক। ববির প্রাঙ্গন জুড়ে বাসন্তী রঙের শাড়ি ও ঝরে পড়া পলাশ খোঁপায় গুজে নারীরা পলাশ-বিলাসে মগ্ন। এছাড়া রোদ্রজ্জ্বল মধ্যাহ্নে খেলার ফাঁকে পুরুষের ক্লান্তি নিবারণের আশ্রয়স্থল ক্যাম্পাসের পলাশঘেরা চত্বর। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক এবং বহিরাগতদের মধ্যে ববির বুকে পলাশের বর্ণমিছিল ইতিবাচকভাবে প্রাণের সঞ্চার করেছে। প্রকৃতি যেমন স্নিগ্ধ, সত্য তেমনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সজীব বিদ্যাপীঠ হিসেবে পলাশের স্পর্শে মিশে একাকার হয়েছে। তাই, পলাশ ফুল রক্তবর্ণের নতুনত্ব নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে করেছে মুখরিত, উচ্ছ্বসিত।
সুমাইয়া আফরিন লিজা।
বাংলা বিভাগ।
“”পলাশের স্পর্শে ববি””
‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল এনে দে এনে দে নইলে বাঁধব না, বাঁধব না চুল,পলাশের গুণগানে বাংলা ও সংস্কৃত বাক্য মুখর। সংস্কৃতে এর নাম কিংশুক, বাংলায় পলাশ। বাংলাতে পলাশকে কোথাও কোথাও ধাক বা ঢাক বলে। উজ্জ্বল প্রস্ফুটনের জন্যই পলাশের ইংরেজি নাম ‘ফ্লেইম অব দ্য ফরেস্ট’ বা অরণ্যের অগ্নিশিখা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অপরূপ সৌন্দর্যের চিত্র ফুটে ওঠে পলাশের আভাসে। মুক্তমঞ্চের চারপাশ যেন পলাশ ফুল দ্বারা আবৃত হয়ে সজ্জিত হয়েছে। বসন্তের ছোঁয়া যে ববিতে লেগেছে সেটা এই পলাশ ফুলকে দেখলে বোঝা যায়।
পলাশের নেশা তীব্র, বসন্তে ফোটা পলাশ বনে ঘোর লাগে। তবে বড় ক্ষণস্থায়ী পলাশের মৌসুম। মাত্র কুড়ি-পঁচিশ দিন। নেশা লাগতে লাগতে, চিনে নিতে নিতে সে উধাও হয়ে যায়। যৌবনের উন্মাদনার মতো ক্ষণস্থায়ী। তবে এই ক্ষণস্থায়ী সুখ চলে গেলেও স্মৃতি থেকে যায়। সেই স্মৃতি নিয়ে আমরা অপেক্ষায় থাকি অন্য বসন্তের।
মোঃ আবুল খায়ের বিশ্বাস
বাংলা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
পলাশ ফুলের রঙ্গিন শোভায় ববি ক্যাম্পাস”
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পলাশের রঙিন পাঁপড়িতে নতুন সাজে-সেজেছে প্রকৃতি। চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল,হলুদ ও লালচে কমলা তিন রঙে সেজেছে বসন্তের রুপকন্যা পলাশ। পলাশফুল শোভা পাচ্ছে গাছে গাছে। ববির সৌন্দর্য যেন আরো বহুগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে বসন্তের রুপকন্যা পলাশ।পলাশ ফুলের আরেক নাম ‘অরণ্যের অগ্নিশিখা’। যার বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma।
মানবিকা সিকদার
বাংলা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পলাশের রুপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি/ অশোকে পলাশে…/ রাঙ্গা নেশা মেঘে মেশা/ দিনের আকাশে’। সুবাস না থাকলেও সৌন্দর্য ছড়াতে জুড়ি নেই পলাশের।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, মুক্তমঞ্চ , অনুষদের আবাসিক এলাকা, রাস্তার দু’পাশে,হলের সামনে এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে শোভা পাচ্ছে এই আগুনরাঙ্গা পলাশফুল। এখানে ছবি তুলতে আসেন শত শত শিক্ষার্থী।পলাশফুল বসন্ত জুড়েই মুগ্ধতা ছড়ায় ববিতে।
বিএনএ/এমএফ