বিএনএ,ডেস্ক : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স তিন মাস পার হয়েছে। এরই মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে নীতি নির্ধারণী নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ সরকার তাদের পরার্মশ গ্রহণ করছে না।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাতে সম্মতি দেয়নি। ফলে সরকারের সঙ্গে সমন্বয়কদের মধ্যে এক ধরনের ছাই চাপা আগুন পরিস্থিতি আগে থেকে তৈরি হয়। কিন্তু ব্যবসায়ী সেখ বশিরউদ্দীন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেয়ার পর সেই ছাই চাপা আগুন হঠাৎ জ্বলে ওঠে। সমন্বয়করা ওই দুই উপদেষ্টাকে আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে দেয় এবং তাদের অপসরণ দাবি করে। এই নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে এক ধরনের যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।
সোমবার রাত ১০টা ৫২ মিনিটে প্রোফাইল পিকচার বদলান হাসনাত। ক্যাপশনে লিখেন,
‘সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ,
শেষ হয়নি যুদ্ধ।
এর আগে ১০ মিনিট আগে রাত ১০টা ৪২ মিনিটে আরেকটি পোস্ট দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি লিখেন, ‘বশির-ফারুকীকে উপদেষ্টা করার প্রতিবাদ সভা থেকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা চরম ফাইজলামি। এগুলা ভণ্ডামি। আপনেরা হাসিনা হয়ে উঠার চেষ্টা কইরেন না। হাসিনারেই থোরাই কেয়ার করছি, উৎখাত করছি। আপনেরা কোন হনু হইছেন?’
এর আগে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা চাই আপনারা দ্রুত তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ছাত্র-নাগরিকদের অংশগ্রহণ ছাড়া যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তা মেনে নেওয়া হবে না। দ্রুত এই সিদ্ধান্তের সমাধান চাই।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘যারা ধানমন্ডি ৩২ কে কাফেলা মনে করে তাদেরকে উপদেষ্টা নিয়োগ করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবন দিয়েছে। তারা বিপ্লব করেছে রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য। কিন্তু শিক্ষার্থীদের রক্তকে পুঁজি করে, শ্রমিকের রক্তকে পুঁজি করে, সাধারণ মানুষের রক্তকে পুঁজি করতে আপনারা যদি মনে করেন উপদেষ্টা হবেন, পদ বাগিয়ে নেবেন তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন।’
ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগ এবং এতে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদের রক্তের অবমাননার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মানববন্ধন থেকে, ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি কোনো ভাবেই মেনে নেবে না ছাত্রসমাজ এমন হুশিয়ারি উচ্চরণ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সমন্বয় উত্তরবঙ্গের জেলা গুলো থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ না পাওয়ার সমালোচনাও করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দেশে গত ৩০ জুলাই পালিত হয় রাষ্ট্রীয় শোক। শোকের রঙ কালো হলেও সেদিন ফেসবুকে হাজার হাজার তরুণের প্রোফাইল পিকচার লাল করা হয়। মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এটিকে প্রহসন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজেদের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে লাল রঙ বেছে নিয়েছিলেন। এবার আবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে লাল প্রোফাইল পিকচার দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরোধ তুঙ্গে ওঠেছে।
বিএনএনিউজ / সাকিব, আরএস/এইচমুন্নী