স্বাস্থ্য ডেস্ক: নিউমোনিয়া শিশুদের জন্য এক অভিশাপের মতো। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং উন্নয়নশীল অনেক দেশেই শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) এ ধরনের শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের প্রতি পাঁচজনে একজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত, যা শতকরা হিসাবে ২০ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিণত বয়সে জন্ম নেয়া, অপুষ্টি, শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকা, বিভিন্ন দূষণ এবং শরীরে জীবাণুর প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি হওয়ার কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে। তারা বলেন, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ নিউমোনিয়া। অবশ্য ১০ বছর আগের তুলনায় সম্প্রতি নিউমোনিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তারপরও এখনো প্রতি ঘণ্টায় এই রোগে একজন করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, অথচ নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য।
এই অবস্থায় আজ ১২ নভেম্বর বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে’।
নিউমোনিয়া ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে হতে পারে। বড়দের হলেও শিশুরাই নিউমোনিয়াতে বেশি আক্রান্ত হয়। জানা গেছে, নিউমোনিয়াতে নব্বইয়ের দশকে দেশে বছরে শিশুমৃত্যু ছিল এক লাখের মতো। সেটি কমে এখন হয়েছে ২৪ হাজারের মতো। এরপরও দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’-এর প্রাথমিক ফলাফলে জানানো হয়, নিউমোনিয়া এবং সংক্রমণ দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এখনো ‘বড় হন্তারক’।
সেখানে আরও বলা হয়, ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে নেয়া হয়। মাত্র ৩৪ শতাংশ শিশু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, নিউমোনিয়াজনিত শিশুমৃত্যুর ৪৫ শতাংশ ঘটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এসব শিশুর বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে দেরি করে আসার কারণে।
জরিপে আরও বলা হয়, ১ মাস থেকে ১১ মাস বয়সী যত শিশু মারা যায়, তার অর্ধেকের মৃত্যু হয় শুধু নিউমোনিয়া এবং গুরুতর সংক্রমণে। একই সঙ্গে নবজাতক (শূন্য থেকে ২৮ দিন) মৃত্যুর তিন-চতুথাংর্শ ঘটে অ্যাস্ফিক্সিয়া (জন্মকালীন শ্বাসরোধ), নিউমোনিয়া বা বড় কোনো সংক্রমণ, অপরিণত ও কম ওজোনের জন্য।
আইসিডিডিআরবি ও ডেটা ফর ইমপ্যাক্ট জানিয়েছে, দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই হাইপক্সিমিয়া (রক্তে অক্সিজেন ঘাটতি) ভোগে।
আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের চারপাশের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ। কিন্তু আমাদের অক্সিজেনের দরকার হয় ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু যাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়-চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম হাইপক্সিমিয়া।’
ইউনিসেফ জানিয়েছে, বায়ুদূষণ নিউমোনিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দূষিত বায়ুর জন্য হয়। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০১৭ সালে ৫ বছরের কম বয়সী ৮ লাখ ৮ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়, যা ওই বয়সী শিশুদের সব ধরনের মৃত্যুর ১৫ শতাংশ। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ও আগে থেকে বিভিন্ন অসুস্থতা রয়েছে এমন ব্যক্তিরাও নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ