বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ায় মা-মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা মামলায় বেলাল হোসেন (২৭) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড ও টিটু সাহা (৪৬) নামে এক আসামিকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম সিরাজাম মুনীরা এ দণ্ডাদেশ দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বেলাল হোসেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার কোরবানপুর বাজার এলাকার মো. মন মিয়ার ছেলে। তিনি নিহত নাছিমা বেগমের স্বামী শাহ আলমের খালাত ভাই।
অপর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত টিটু সাহা একই থানার বাখরাবাদ এলাকার রঞ্জিত মাষ্টারের বাড়ির নেপাল সাহার ছেলে। তিনি পেশায় জুয়েলারী দোকানের কর্মচারী।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর দীর্ঘতম বড়ুয়া দীঘু মামলার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। বেলাল যে স্বর্ণ লুট করেছিল তা কিনে নিজের হেফাজতে রাখায় আসামি টিটু সাহাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাজা পরোয়ানামূলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ায় মোবাশ্বের মিয়ার ছয় তলা ভবনের চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকতেন খাসির মাংস ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম। ওই বাসায় শাহ আলম, তার স্ত্রী নাছিমা বেগম (৩৭), মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনী (১০), শাহ আলমের শ্যালক আলাল ও দুই ছেলে থাকতেন। ২০১৫ সালের ৭ মে সকালে শাহ আলম দোকানে চলে যান। সকাল ৯টার দিকে তার দুই ছেলে স্কুলে যায়। তখন ঘরে ছিল নাছিমা ও মেয়ে রিয়া। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শাহ আলমকে তার শ্যালক আলাল ফোন করে জানায় নাছিমা ও রিয়া হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
শাহ আলম ঘরে গিয়ে স্ত্রী-কন্যাকে মেঝেতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। ঘরে থাকা ১ লাখ ১১ হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও দুটি মোবাইল ফোন সেট নিয়ে যায় হত্যাকারী। ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শাহ আলম বাদি হয়ে সদরঘাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
আরও পড়ুন: কুমিল্লার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানাকে কারাদণ্ড
২০১৫ সালের ২৭ মে হত্যাকাণ্ডের দিন হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে খুনের শিকার নাছিমা বেগমের স্বামী শাহ আলমের খালাতো ভাই বেলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নাছিমা বেগমের স্বর্ণালংকার নগরীর বাকলিয়া ইসহাকের পুল এলাকায় একটি জুয়েলার্সের কর্মচারী টিটু সাহার কাছে বিক্রি করেছিল বেলাল হোসেন। পরে টিটু সাহাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। আসামি বেলাল হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বিএনএনিউজ/বিএম