20 C
আবহাওয়া
৮:৫৭ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৯১ (মাগুরা-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৯১ (মাগুরা-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মাগুরা-১ আসনের হালচাল।

মাগুরা-১ আসন

মাগুরা-১ সংসদীয় আসনটি শ্রীপুর ও মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর, আঠার খাদা, কছুন্দী, বগিয়া, হাজরাপুর, রাঘব দাইড়, মঘী, জগদল ও চাউলিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৯১তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির মজিদ উল হক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ৩ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪ শত ৫৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির মজিদ উল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৭ শত ২৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আলতাফ হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৭ শত ৯৫ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মজিদ উল হক বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মজিদ উল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৬ শত ০৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউল আজম। তিনি পান ২ হাজার ৬শত ২১ ভোট। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ১ শত ৯৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৩ হাজার ৫ শত ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির ইকবাল আখতার খান। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৫ শত ৯৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী  

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৭ শত ৫৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১০ হাজার ৫ শত ১৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ৫ শত ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৪ শত ৬৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫২ হাজার ২ শত ৭২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৪ হাজার ১শত ২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইকবাল আখতার খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯ হাজার ৮ শত ৩৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭ হাজার ১ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫ হাজার ১ শত ৫০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিরাজুল আকবর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়া। হরিন প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৪ শত ৭৪ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান শিখর বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ১ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৩ হাজার ৬শত ১৬ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান শিখর, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনোয়ার হোসেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির হাসান সিরাজ, তারা প্রতীকে জেএসডির এম এ আউয়াল, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর কে এম মোতাসিম বিল্লা, আম প্রতীকে ন্যাশন্যাল পিপলস্ পার্টির কাজী তৌহিদুল আলম, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাজিরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান শিখর বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মনোয়ার হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১৬ হাজার ৬ শত ৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মাগুরা-১ আসনে পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, অষ্টম নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মাগুরা-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৬৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪০.০১%, বিএনপি ৪৮.২৭ %, জাতীয় পার্টি ১.৬৩% , জামায়াতে ইসলামী ৪.৭৭ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৩২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৫৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৫২%, বিএনপি ১৯.৭৫%, জাতীয় পাটি ৩০.০২%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৪৫ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.২৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৩.৯৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৩৩%, ৪দলীয় জোট ৪১.০৭%, জাতীয় পার্টি ১০.৭২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৮৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৩৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৩.২৫%, ৪ দলীয় জোট ৪৩.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৩.১৪% ভোট পায়।

মাগুরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব (রাজনৈতিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসার সুবাদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগে সাইফুজ্জামান শিখরের রয়েছে একচেটিয়া প্রভাব। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সংসদ সদস্য হয়ে গত চার বছরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আবদুল ওয়াহাব।

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বললেও ভিতরে ভিতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল আকতার খান কাফুর। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এছাড়া বিএনপি থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহম্মেদ এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের উপদেষ্টা মরহুম হাসান সিরাজ সুজার পুত্র সিরাজুস সায়েফিন সাঈফ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা নাজিরুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাগুরা- ১ সংসদীয় আসনে পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়। এ আসনটিতে ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শক্ত খুঁটি গেড়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল তেমন নেই। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত না হলেও জামায়াতে ইসলামীই হচ্ছে বিএনপির ভোটের লড়াইয়ের শক্তি। জামায়াতে ইসলামীর বিপুল নিরব ভোটার রয়েছে। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৯১তম মাগুরা-১ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ