বিএনএ,চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি(বিএনএ)’র সম্পাদক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মজুমদার বলেছেন, মাদক ও যৌতুক একটি সমাজিক ব্যাধি। আমি এ বিষয়ে শুধু এইটুকু বলতে চাই, সারা দেশে যৌতুক দেয়া-নেয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। যৌতুক দেয়া ও নেয়া ইসলাম ধর্মে হারাম।দেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তা আমলে নিচ্ছে না। বিশেষ করে চট্টগ্রামে । অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে মেয়ের বাবা যখন ছেলেকে বিয়ে করাতে যান তখন যৌতুক দাবি করেন। ফলে এটি সামাজিক প্রথা বা রীতিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু জিনিষপত্র দেয়া নেয়া নয়, ছেলে পক্ষের শত শত লোককে মেয়ে পক্ষের আপ্যায়নও যৌতুক। ইসলাম ধর্মে এটি অনুমোদন করে না। এটা এক ধরনের জুলুম। সেই জুলুমটাকে ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম করে দেনমোহর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শনিবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় নগরের জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ ময়দানে যৌতুক ও মাদকবিরোধী মহাসমাবেশের ২য় অধিবেশনের উদ্বোধকের বক্তব্যে বিএনএ সম্পাদক এসব কথা বলেন।
বিএনএ সম্পাদক বলেন, ইসলাম শুধু যৌতুক প্রথার বিরোধীই নয়, বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে সব ধরনের অপচয়ের বিপক্ষে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সেই বিয়েই সর্বাধিক বরকতময়, যে বিয়েতে ব্যয় খুব সামান্যই হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিয়ে করেছেন সাধারণভাবে, নিজের প্রিয় কন্যা হজরত ফাতেমা রা.-কে বিয়ে দিয়েছেন একইভাবে। বিয়েতে অপব্যয় পাত্র-পাত্রীর পরিবারের জন্য কষ্টকর পরিণতি ডেকে আনে। সামাজিক সম্মান রক্ষার অজুহাতে অনেকে বিয়েতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। যা ইসলাম কোনোভাবেই অনুমোদন করে না।
আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, বিয়েতে বর কর্তৃক স্ত্রীকে দেনমোহর আদায় করা ফরজ। অতি পরিতাপের বিষয় হলো, দেনমোহর বিষয়ে সমাজে অজ্ঞতা ও অবহেলা চরম পর্যায়ে রয়েছে। ধর্মকে ভালোবাসেন, এমন অনেক মানুষও দেনমোহরের বিষয়ে সচেতন নন। এ বিষয়ে অবহেলা এত প্রকট যে, নফল ইবাদতকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, মোহর আদায়কে তার সিকি ভাগও মনে করেন না। অথচ দেনমোহর আদায় একটি আবশ্যক বিধান।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেনমোহর নামেমাত্র নির্ধারণ করা হয়। অনেকটা যেন নিয়ম রক্ষার বিষয়। আদায় করার কোনো সদিচ্ছা নেই। বিয়ের কাবিননামার ফরমে দেনমোহরের পরিমাণ লিখতে হয়, তাই লেখেন!
তিনি আরও বলেন, শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, বাংলাদেশে ১৯৮০ সাল থেকে আইনের মাধ্যমে যৌতুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর দুই দফায় সংশোধন করে গত বছর তা হালনাগাদ করে যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ নামে নতুন আইন পাশ করা হয়। যেখানে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষ দেশের আইন, ধর্মের নিষেধ কোনটা মানেন না। পাল্টা নানা যুক্তি দেখান।
মাদক প্রসঙ্গে বিএনএ সম্পাদক বলেন, ইসলামে নেশা বা মাদক সেবন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং অপবিত্র কাজ। কারণ মাদক কিংবা নেশা মানুষের মস্তিষ্ককে বিকল করে দেয়। মাদক সেবনের ফলে কোনো মানুষ স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যেসব পানীয় নেশা সৃষ্টি করে তা হারাম। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মাদক সেবনসহ এসব অবৈধ কাজ নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে একাধিক আয়াতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন।
যেসব জিনিস মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি করে দেয়, স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধাগ্রস্ত করে, সে জিনিস ব্যবহারের ব্যাপারেই ইসলামের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১৮ তে বলা হয়েছে, ইয়াবা কোকেন, হেরোইন পরিবহন, কেনাবেচা, ব্যবসা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, হস্তান্তর, সরবরাহ ইত্যাদি অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের বিধান রেখে সংসদে পাস হয়েছে । এই আইনে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনে অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ, সরবরাহ, মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও একই ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তার পরও মাদক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। টনে টনে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা আসছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিন লাখ লাখ ইয়াবা জব্দ করছে। আটক করা হচ্ছে বহনকারিকে কিন্তু ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।
শুধু আইন করলে হবে না, তার প্রযোগও থাকতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে মূল মাদক কারবারিদের। তবেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এছাড়া দাওয়াতি ঈমানি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি,আল্লামা আবুল কাশেম নূরী,আল্লামা শাহেদুর রহমান হাশেমী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কাউছার হামিদ। সমাবেশের উদ্বোধক ছিলেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের পীর মাওলানা সৈয়্যদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী।
সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মো. জাহিদুল হাসান রুবায়েত এবং সদস্য সচিব মো. মাছুমুর রশিদ কাদেরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে মূখ্য আলোচক ছিলেন আঞ্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরী।
আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম কলেজ রসায়ন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান আকবর হোসেন এবং বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. মাসুম চৌধুরী।
করোনা মোকাবিলায় সারাদেশে অভিনব করোনা প্রতিরোধক বুথের উদ্ভাবন কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় সাবেক ছাত্রনেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরকে।
বিএনএ/ মনির ফয়সাল, ওজি