বিশ্ব ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের সমস্ত আমদানির ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, যা কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের জন্য বিদ্যমান শুল্ক ছাড় প্রত্যাহার করবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থা আগামী মাসে কার্যকর হতে পারে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্যবসাকে উচ্চ মূল্যে এই ধাতব উপকরণ আমদানি করতে হবে।
কোন কোন পণ্যের দাম বাড়তে পারে?
স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম বিভিন্ন পণ্যের প্রধান উপাদান হওয়ায় এটির মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি বাজারের বিভিন্ন খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক কোম্পানি এই অতিরিক্ত ব্যয় ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে।
ক্যানজাত খাবারের দাম বাড়তে পারে
ক্যান ম্যানুফ্যাকচারার্স ইনস্টিটিউট (CMI) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ক্যান তৈরির ৭০% স্টিলই আমদানি করা হয়, যা মূলত জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং কানাডা থেকে আসে।
২০১৮ সালে ট্রাম্প স্টিল আমদানির উপর শুল্ক আরোপের পর অনেক ক্যান নির্মাতা “ব্যতিক্রমী ছাড়” পেয়েছিল, কিন্তু এইবার কোনো ছাড় না থাকায় গ্রোসারি স্টোরে ক্যানজাত খাবারের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
CMI-এর প্রেসিডেন্ট রবার্ট বাডওয়ে সতর্ক করে বলেন, “প্রেসিডেন্ট হয়তো মনে করছেন যে এই শুল্ক ব্যবস্থা স্টিল শিল্পকে সুরক্ষা দেবে, কিন্তু এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করতে পারে।”
শীতল পানীয় এবং বিয়ার হবে ব্যয়বহুল
অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্কের কারণে কোকা-কোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় নির্মাতারা খরচ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কোকা-কোলার প্রধান নির্বাহী জেমস কুইন্সি বলেছেন, কোম্পানি কিছু উপায়ে ব্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত ব্যয় ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
গাড়ির দাম বাড়তে পারে
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর শুল্ক আরোপ করার পর ফোর্ড ও জেনারেল মোটরস ঘোষণা করেছিল যে, তাদের উৎপাদন ব্যয় ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়বে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান Morningstar হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের শুল্কের কারণে গাড়ির দাম গড়ে ৩০০ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছিল।
বিশ্লেষক ডেভিড হুইস্টন সতর্ক করেছেন যে, এবারের নতুন শুল্কের কারণে ফোর্ডের উৎপাদন খরচ আবারও বেড়ে যেতে পারে এবং এই ব্যয়ের কিছু অংশ গাড়ির ক্রেতাদের উপর চাপানো হতে পারে।
তবে, বিশ্লেষক মাইকেল ওয়াল বলেছেন, গাড়ির বাজারে বিক্রির নিম্নগতি থাকায় কোম্পানিগুলো পুরোপুরি ব্যয় বৃদ্ধির বোঝা ভোক্তাদের উপর চাপানোর আগে দ্বিধা করবে।
তবে, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা সমস্ত পণ্যের ওপর ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ (যা মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে) কার্যকর হলে, গাড়ির দাম ৩,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে TD Economics পূর্বাভাস দিয়েছে।
গৃহনির্মাণ খরচ বাড়বে
স্টিল নির্মাণ শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা বাড়ির ফ্রেম, সরঞ্জাম ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব হোম বিল্ডার্স-এর চেয়ারম্যান কার্ল হ্যারিস বলেছেন, “ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত গৃহনির্মাণকে সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যের বিপরীত। এটি নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করবে এবং নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পুনর্নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করবে।”
গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির দাম বাড়বে
২০১৮ সালে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর ওয়াশিং মেশিন নির্মাতা হুইরপুল জানিয়েছিল যে, স্টিলের দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের খরচ ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবারও নির্মাতারা তাদের উৎপাদন খরচ ক্রেতাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে, যার ফলে ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, ওভেনসহ বিভিন্ন গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির দাম বাড়তে পারে।
সংক্ষেপে মূল প্রভাব
- ক্যানজাত খাবারের দাম বাড়তে পারে
- কোমল পানীয় ও বিয়ারের দাম বাড়তে পারে
- গাড়ির দাম ৩০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে
- গৃহনির্মাণ ব্যয় বাড়বে, ফলে বাড়ির দামও বাড়তে পারে
- ওয়াশিং মেশিন ও অন্যান্য গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির দাম বাড়তে পারে
ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ভোক্তাদের জন্য বাড়তি ব্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছে। যদিও কিছু কোম্পানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে গাড়ি, বাড়ি, খাদ্যপণ্য ও গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।
সূত্র : বিবিসি
বিএনএনিউজ২৪,এসজিএন