31 C
আবহাওয়া
১২:২২ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৮৭ (চট্টগ্রাম-১০)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৮৭ (চট্টগ্রাম-১০)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল সংসদীয় আসন-২৮৭ (চট্টগ্রাম-১০)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর। আজ থাকছে চট্টগ্রাম-১০ আসনের হালচাল।

চট্টগ্রাম-১০ আসন

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী) সংসদীয় আসনটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ০৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৮৭ তম আসন। ২০০৮ সালে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পরিবর্তন করে এই আসনটি সৃষ্টি করা হয়।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমিন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮ শত ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮ শত ৫০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৭ হাজার ১ শত ৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুলাহ আল নোমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৭ হাজার ৮ শত ১৫ ভোট।

YouTube player

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমিন বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ডা. আফসারুল আমিন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩ শত ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আফসারুল আমিন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির কাজী মো. ইউসুফ আলী চৌধুরী, টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ’র জি এস এম আতিউল্লাহ ওয়াসিম, মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের মহিন উদ্দীন, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা খাতুন এবং কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মারুফ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আফসারুল আমিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪১ হাজার ৩ শত ৯০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

একাদশ সংসদ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু বিজয়ী হন

গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীন মৃত্যুবরণ করেন। শূন্য আসনে ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৭ হাজার ১ শত ৫৩ জন। যা শতাংশের হিসেবে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু নির্বাচিত হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৯ শত ২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সামসুল আলম। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১ হাজার ৫ শত ৭২ ভোট।

এছাড়া তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছে ১ হাজার ২শত ৩০ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশীদ মিয়া ছড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৫ শত ৭৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী আরমান আলী বেলুন প্রতীকে পেয়েছেন ৪ শত ৮০ ভোট, আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া রকেট প্রতীকে পেয়েছেন ৩ শত ৬৯ ভোট।

এই আসনটি সৃষ্টি হওয়ার পর শুধুমাত্র ২০০৮ সালের নবম সংসদে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.২৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৭.৯৬%, ৪ দলীয় জোট ৪৪.৭১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৩৩% ভোট পায়।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং- হালিশহর- পাহাড়তলী-খুলশী আংশিক) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক সিটি করপোরেশন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক।

এছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফাউন্ডেশনের কর্ণধার এম মনজুর আলম।

বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। দলটি এক দফার সরকার পতন আনোন্দলন নিয়ে ব্যস্ত। বিএনপি নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি দলের একক প্রার্থী। তবে দলের সাম্প্রতিক কোন কর্মসূচিতে তাকে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপিতে তিনি এখন কোনঠাসা। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর। এছাড়া এই আসন থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান চৌধুরী।

এই আসনে নতুন দলের নতুন একজন প্রার্থীকে দেখা যেতে পারে। তিনি হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, সাবেক ক্রিকেট ও ফুটবল খেলোয়াড় মোহাম্মদ ফেরদৌস বশির। ক্লিন ও তারণ্যের প্রতীক ফেরদৌস বশির ইতোমধ্যে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারক হিসাবে কাজ করছেন। ১২ নভেম্বর দলটির প্রথম কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এই কনভেনশনের পর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবেন।

সর্বশেষ অনুষ্ঠিত চাকসু নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত ফেরদৌস বশির ইতোমধ্যে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন। যাচ্ছেন বস্তি থেকে অট্টালিকার বাসিন্দাদের কাছে। যেমনটা করেছিলেন করোনাকালীন সময়ে। সোশ্যাল ও পলিটিক্যাল এলিটরা যখন ঘরে লকডাউনে ঘরে বসে আরাম আয়েশ করেছেন তখন মানবতার অগ্রদূত ফেরদৌস বশির আত্মমানবতার সেবায় খাদ্য, সুরক্ষা সামগ্রী, নগদ অর্থ, অক্সিজেন নিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কাছে ছুটে গেছেন।
ফেরদৌস বশির তুলে ধরেছেন তার মিশন-ভিশন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও ভাবনা।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-৮ ও ৯ এর অংশ বিশেষ নিয়ে জনসংখ্যার ভিত্তিতে এই আসনটির গোড়াপত্তন করা হয় ২০০৮ সালে। তখন থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে ভাল হলেও দলীয় কোন্দল তীব্র। যেকারণে উপ-নির্বাচনে দলীয় হেভিওয়েট নেতাদের প্রচারণায় দেখা যায়নি। সেকারণে আওয়ামী লীগের ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন উপ-নির্বাচনে বিজয়ী মহিউদ্দিন বাচ্চু।

গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা বলয়ের বাহিরে বিএনপি। সাংগঠনিক তৎপরতা দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রীক। তাছাড়া আমির খসরু মাহমুদ ও আব্দুলাহ আল নোমানের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক সমঝোতার অভাব। নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত। তবে প্রচুর নিরব ভোট রয়েছে। যারা ধানের শীষ মার্কা চিনে, কোন ব্যক্তিকে চিনে না।

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৮৬ (চট্টগ্রাম-৯)

জাতীয় পার্টির কার্যক্রম কাগজে কলমে। জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা দৃশ্যমান না হলেও ভিতরে ভিতরে বেশ সংগঠিত। তাদের ভোট ব্যাংক রয়েছে।

এই আসনে সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘পানি’। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে থাকে। গ্রীষ্ম ও শীতকালে বিশুদ্ধ পানির সংকট। গত ১৫ বছর ধরে প্রতিনিধিত্বকারি দলটি এই সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। যে দল বা ব্যক্তি এ সমস্যা সমাধান করবেন বলে মনে করবে ভোটাররা তার দিকে ঝুঁকবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এবং আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা নিরব থাকলে জাতীয় সংসদের ২৮৭ তম সংসদীয় আসন (চট্টগ্রাম-১০) আসনটিতে আওয়ামী লীগ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় সন্দেহ আছে এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএনিউজ/ শাম্মী/ রেহানা/ বাবর/ ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ