27 C
আবহাওয়া
১২:১১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১২ (ফরিদপুর-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১২ (ফরিদপুর-২)


বিএনএ, ঢাকা : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ফরিদপুর-২ আসনের হালচাল।

ফরিদপুর-২  আসন

ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনটি নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুর উপজেলা এবং কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১২ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী বিজয়ী হন 

১৯৯১ সালের ২৭ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭১ হাজার ৪ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৭ হাজার ১ শত ১৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ২ শত ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কে এম ওবায়দুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ২ শত ১০ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবুল হোসেন মিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির আবুল হোসেন মিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কে এম ওবায়দুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৩ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির কে এম ওবায়দুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ১ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৫ শত ৭২ ভোট ।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কে এম ওবায়দুর রহমান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪ শত ১৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬২ হাজার ২ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির কে এম ওবায়দুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৪ শত ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ৪ শত ৭৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৪ শত ৩৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ২ শত ৯২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৬ হাজার ৪ শত ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামা ওবায়েদ ইসলাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৭ শত ২৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: সাজেদা চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সাজেদা চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ১ শত ৭২ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শামা ওবায়েদ ইসলাম , বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলন এর জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কে এম ছরোয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ১৯ হাজার ১ শত ৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামা ওবায়েদ ইসলাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১৪ হাজার ৯ শত ১২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
২০২২ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। ওই বছর ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠপুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ,সপ্তম,অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ফরিদপুর-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফরিদপুর-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৬.৬৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৩৩%, বিএনপি ৭.৮৬%, জাতীয় পার্টি ০.৩৭% জামায়াত ইসলামী ০.০০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫৩.৪৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৭৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৭২%, বিএনপি ৪৬.১৮% জাতীয় পাটি ১.৯৫%, জামায়াত ইসলামী ১.৬০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৫৫% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৯৮ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৯০%, ৪ দলীয় জোট ৫৩.২৮%, জাতীয় পার্টি ০.৫৯ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৩০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.৩০%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.১৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫১% ভোট পায়।

ফরিদপুর-২ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। লাবু ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর আতমা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ মিয়া।

বিএনপি থেকে মনোনয় চাইবেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের কন্যা, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন-উপনির্বাচন মিলে এ আসনে ভোট হয়েছে মোট ১২ বার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ জিতেছে ছয় বার, বিএনপি তিনবার, জাতীয় পার্টি দুই বার এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জিতেছে একবার। এই আসনে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক দিক থেকে বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং পরবর্তী সময়ে টানা তিনবার সংসদ উপনেতা থাকায় এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিকভাবে দলের শক্ত ভিত তৈরি করেছেন। কিন্তু সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর সেই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। দলে রয়েছে বিভক্তি ও কোন্দল। এই মূহুর্তে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থানে আছে তা বলা যাবে না।
একই অবস্থা বিএনপিতেও। ওবায়দুর রহমানের মৃত্যুর আগে এই আসনটিতে বিএনপির খুবই ‘দাপট’ ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর দাপট অনেকটাই কমে এসেছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে কে এম ওবায়দুর রহমান মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তার ভাই কে এম জাহাঙ্গীর, স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ এবং কন্যা শামা ওবায়েদ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ছিনিয়ে আনার লড়াইয়ে জয়ী হন শামা ওবায়েদ। মেয়ের কাছে মনোনয়ন লড়াইয়ে হেরে বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায় নেন শাহেদা ওবায়েদ।

২০১৩ সালে চাচা কে এম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান শামা ওবায়েদ। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কে এম জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ বহিষ্কারাদেশের পেছনে যে শামা ওবায়েদের হাত ছিল, তা এখন ওপেন সিক্রেট। এভাবে একে একে ঘরের শত্রুকে পরাস্ত করে শামা ওবায়েদই এখন ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির কাণ্ডারী।

নিজের যোগ্যতা এবং বাবার ব্যক্তি ইমেজ কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন পুনরুদ্ধার করতে চান তিনি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২১২তম সংসদীয় আসন (ফরিদপুর-২) আসনটিতে শামা ওবায়েদকে মোকাবিলা করা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সহজ হবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১১ (ফরিদপুর-১)

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ