23 C
আবহাওয়া
১১:৩৩ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ঝিনাইদহে অমিতাভ সাহা হত্যা: সন্দেহের তীর তিশা নন্দির দিকে

ঝিনাইদহে অমিতাভ সাহা হত্যা: সন্দেহের তীর তিশা নন্দির দিকে

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া

বিএনএ ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের চাঞ্চল্যকার অমিতাভ সাহা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজলু ওরফে রাজু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর এলাকার মুনাব্বর হোসেনের ছেলে। পুলিশের দাবী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় মহেশপুর সীমান্ত থেকে রোববার রাতে রাজলুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার(১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঝিনাইদহ পুলিস সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া এই তথ্য জানান। এ সময় ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও সদর থানার ওসি শেখ সোহেল রানাসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদঘাটনে পুলিশ মাঠে রয়েছে বলে জানানো হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, অমিতাভ সাহা গত ৩১ আগষ্ট নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পর গত ৩ সেপ্টম্বর ঝিনাইদহ শহরের ধোপাঘাটা ব্রীজ এলাকায় তার বস্তা বন্দি লাশ খুঁজে পায় পুলিশ। নিহত অমিতাভ সাহা মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের অশোক সাহার ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ আদালত চত্বরে একটি ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন। লাশ উদ্ধারের পর তার কথিত স্ত্রী তিশা নন্দি মরদেহটি অমিতাভের বলে সনাক্ত করেন।

পুলিশের একাধিক সুত্রে জানা গেছে, অমিতাভ ও তিশা নন্দি স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে ঝিনাইদহ শহরের সড়ক ও জনপথ অফিসের বিপরীতে জনৈক ওলিয়ার রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওলিয়ার রহমানের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নানচা গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক ঢাকা হেড অফিসে চাকরী করেন। এর আগেও তারা একাধিক বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। তাদের এই ঘন ঘন বাসা পরিবর্তনের নেপথ্যে কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তিশা নন্দি কালীগঞ্জের বিনয় নন্দিকে ছেড়ে অমিতাভকে বিয়ে করে ঝিনাইদহ শহরে বসবাস করলেও তাদের বাসায় অচেনা মানুষের আনাগোনা ছিল।

এদিকে তিশা নন্দির অভিযোগ হাটগোপালপুর এলাকার রাজলু ওরফে রাজু নামে এক ব্যক্তি চাকরী দেয়ার নাম করে গত ৩১ আগষ্ট অমিতাভ সাহাকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, অমিতাভ সাহা ও তার কথিত স্ত্রী তিশা নন্দি একাধিক চেক ডিজঅনার মামলার আসামী ছিলেন। এ নিয়ে তারা জেলও খেটেছেন। ডিসি কোর্ট এলাকায় দোকানদারী করার সুবাদে নতুন কোর্টপাড়া এলাকার ওয়াজেদ আলীর ছেলে মশিউর রহমান মিন্টুর কাছ থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে আর দেননি। এ নিয়ে তিনি ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন যার মামলা নং ৬০৩/২৩। এর আগে মাগুরার চেক ডিজঅনার মামলায় কারাগারে ছিলেন অমিতাভ।

চাকলাপাড়ার কার্তিক শর্মার স্ত্রী বাসন্তি শর্মা অভিযোগ করেন, অমিতাভ জেল হাজতে গেলে তার কথিত স্ত্রী তিশা রাজলু ওরফে রাজুর সঙ্গে স্বামী স্ত্রীর মতো বসবাস করতেন। তাদের সব ঝামেলা রাজু সামাল দিতেন। বাসন্তি শর্মা আরো জানান, তার কাছ থেকে অমিতাভ ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা নেন দোকান করার নামে। এই টাকা তিনি সৃজনী এনজিও থেকে ঋন নিয়ে তাকে দেন। এনজিওর ঋন নিয়ে এখন তিনি গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছেন।

বাসন্তির স্বামী কার্তিক শর্মা জানান, অমিতাভ ও তার স্ত্রী চাকলাপাড়ার সজিব জোয়ারদারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এই বাসায় এখনো মালামাল রয়েছে। টাকার বিষয়ে তার স্ত্রী ঝিনাইদহের আদালতে অমিতাভ ও তার স্ত্রী তিশা নন্দির বিরুদ্ধে ৬২৩/২৩ ও ৬৩১/২৩ নাম্বারে দুইটি চেক ডিজঅনারের মামলা করেন। টাকার শোকে বাসন্তি শর্মা এখন শয্যাশায়ী বলে যোগ করেন তার স্বামী কার্তিক।

এদিকে খোর্দ ঝিনাইদহের সাধন কর্মকারের কাছ থেকে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অমিতাভ ও তিশা নন্দি। তাদের বিরুদ্ধে এ নিয়ে একটি উকিল নোটিশ দিয়েছেন সাধন কর্মকার। এ তথ্য জানান সাধনের আইনজীবী এ্যাডঃ জাকারিয়া মিলন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিশা ও অমতাভ ঝিনাইদহ, মাগুরা, মোহাম্মদপুর ও কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই ধারের টাকার কারণে তিশা ও অমিতাভ নিজ এলাকায় যেতেন না। ঝিনাইদহ শহরে তাদের সেল্টার দিয়ে রাখতেন রাজলু ওরফে রাজু। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ধারণা অমিতাভকে হত্যা করে তার কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা সেই সঙ্গে তার স্ত্রীকে একান্ত ভাবে পাশে পেতেই হয়তো রাজলু এই হত্যার পরিকল্পনা করে।

উল্লেখ্য তিশা নন্দি নিহত অমিতাভকে স্বামী বলে দাবী করলেও গত ৯ আগষ্ট ঝিনাইদহ নোটারী পাবলিকে উপস্থিত হয়ে অমিতাভকে হিন্দু আইনমতে ত্যাগ করেন। তিশা নন্দি ত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন, “অমিতাভকে বিয়ের পর থেকে তার সংসারে অশান্তি। যৌতুক নিয়ে তাকে মারধর করা হতো। অমিতাভ পরনারীতে আসক্ত। একাধিক মামলা তার নামে।  আগেও তার একাধিক স্ত্রী ছিল। ফলে আমি তাকে স্বামী হিসেবে ত্যাগ করলাম”। তিশা নন্দি কালীগঞ্জ উপজেলার গোমরাইল গ্রামের বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের মেয়ে হিসেবে ত্যাগপত্রে উল্লেখ করলেও অমিতাভের মরদেহ উদ্ধারের সময় মিডিয়ার সামনে নিজের বাড়ি মাগুরার বিনোদপুর বলে দাবী করেন। পাওনাদাররা সন্দেহ করছে,  অমিতাভের  হত্যার পেছনে তিশা নন্দির হাত থাকতে পারে! ফলে অমিতাভ হত্যা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েগেছে।

আতিক টুটুল,জিএন/হাছিনা আখতার মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ