বিএনএ, চট্টগ্রাম : সীতাকুণ্ডের তুলাতলীতে গ্যাস সিলিন্ডার কাটা চক্রের ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। র্যাব-৭ এর ডিএডি মো: আব্দুল মতিন বাদী হয়ে শনিবার (১১ জুন) সীতাকুণ্ড থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৪/২২৭।মামলার ধারা : ৪১৩/৪০৬/৪২০/৪২৭/১২০-খ/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
মামলার আসামীরা হচ্ছে ,ইসমাইল হোসেন(৫১), মহসীন(৫১), নুরুননবী (৪৮), হাসান(২৬), মিজান(২৬)সাইফুদ্দিন(৪৪), রহিম উদ্দিন(৩৬), আক্তার হোসেন(৪৮), সাদেকুল ইসলাম (৫২), মঈনউদ্দিন(৪০), রাশেদ (৩২), সেলিম(৫৫), শাহীন(৪০), হারুন(৩৪), পারভেজ(৪০)মাসুদ(৩৫)।
উল্লেখ, সীতাকুন্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদকে ম্যানেজ করে আসামীরা গত তিনমাসের বেশি সময় ধরে সন্ধ্যার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত ৫টি স্পটে লাখ লাখ সিলিন্ডার কাটার মহা উৎসবে নামে।
পরবর্তীতে র্যাব মুলহোতাসহ এ চক্রের অধিকাংশ সদস্যকে সানাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। র্যাব এর পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাটি এখন তদন্ত করবে সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ফলে মুলহোতারা অভিযোগপত্রে থাকবেন কীনা ,আদৌ শাস্তির আওতায় আসবে কীনা এবং পালিয়ে থাকা আসামিদের গ্রেফতারে সীতাকুন্ড থানার বর্তমান ওসি কতটা আন্তরিক হবেন তা নিয়ে সংশয় সন্দেহ রয়ে গেছে।
এর আগে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির প্রকাশিত সংবাদের জেরে সীতাকুণ্ডের তুলাতুলি এলাকা থেকে ১৩ হাজার ২৮ টা গ্যাস সিলিন্ডার জব্দ করেছে র্যাব। এ ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টায় র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল এম এ ইউসুফ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
আটককৃতরা হলো- শফিউর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন কুসুম, ফয়েজ আহাম্মদের ছেলে মহসীন, সিদ্দিকের ছেলে নুরুন নবীসহ নয়জন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল এম এ ইউসুফ বলেন, প্রতিটি সিলিন্ডারের ওজন গড়ে ১৩ কেজি। প্রতিটি সিলিন্ডারে মুখে ২৫০ গ্রাম এর তামা রয়েছে। যা বিক্রি হয় ৭ শত টাকা কেজি দরে। সে হিসেবে একটি কাটা সিলিন্ডারের বিক্রয় মূল্য ৯৫৫ টাকা। একটি খালি সিলিন্ডার কিনতে পাওয়া যায় ৬শত থেকে ৭ শত টাকায়। অথচ গ্যাস সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ একটি নতুন সিলিন্ডার কিনে ২ হাজার ৫ শত টাকা থেকে দুই হাজার ৮ শত টাকায়।
বাজারমূল্য অনেক বেশি হলেও বাজারজাতের পরিমাণ বাড়াতে গ্রাহকের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার প্রতি ভর্তুকি দেয় গ্যাস বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিটি সিলিন্ডার কেটে বিক্রি করলে লাভ হয় কমপক্ষে ২ শত টাকা। গত ৩ মাসে অন্তত ১০ লাখ সিলিন্ডার কাটা হয়েছে।
সে হিসেবে অন্তত: তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি! অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে ২৭টি প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস বাজারজাত করে থাকে। এ খাতে বিনিয়োগ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ লাখ। এ সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামেও এখন এলপি গ্যাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে প্রতিযোগিতা। প্রতিষ্ঠানগুলোর মার্কেটিং ম্যানেজারগণ কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া প্যাকেজে যে কাউকে হাজার হাজার সিলিন্ডার দিয়ে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের সিলিন্ডারসহ ক্রয় দাম এক হাজার ৬ শত টাকা থেকে ৭ শত টাকা।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের জন্য কোম্পানি কমদামে গ্রাহকদের মাঝে সিলিন্ডার বিক্রি করে থাকে। প্রকৃত অর্থে একটি খালি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ২৮০০/- টাকা। গ্যাস সিলিন্ডার বাইরে কাটা সর্ম্পূণ নিষেধ কিন্তু আসামিরা কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহ করে সেগুলো কেটে বিভিন্ন রি-রোলিং মিলে সরবরাহ করে থাকে।
চক্রটি পান দোকান, মুদি দোকান, বিকাশ-নগদের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাব এজেন্টের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে থাকে । যদিও এভাবে গ্যাস বিক্রি অবৈধ। সারাদেশ থেকে পরবর্তীতে খালি গ্যাস সিলিন্ডারগুলো সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেয়া হয় সীতাকুণ্ড থানার তুলাতুলিতে এলপি কুসুম সিন্ডিকেট এর কাছে। কুসুম সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে কাটা হয় গ্যাস সিলিন্ডারগুলো। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিলিন্ডারই বেশি। নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকের কাছ থেকে ফেরত আসা খালি সিলিন্ডার রিফিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ফ্যাক্টরিতে পাঠাতে হয় পরিবেশকদের। তবে সম্প্রতি দেখা গেছে, খালি সিলিন্ডার ফেরত যাওয়ার পরিমাণ গাণিতিক হারে কমছে।
‘বিএনএ’র প্রকাশিত সংবাদে গ্যাস সিলিন্ডার কাটা চক্রের ৩ হোতা আটক
সীতাকুণ্ডের তুলাতলীতে কাটা হচ্ছে লাখ লাখ গ্যাস সিলিন্ডার!
বিএনএ/ ওজি