বিএনএ, চট্টগ্রাম: ফেনী সদর থানা এলাকায় নিজ স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্মম ও নৃশংসভাবে গুরুতর আঘাতের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী স্বামী লিটন প্রকাশ বাবুল এবং তার আপন ভাই মো. সুমনকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর আটক করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) দিবাগত রাত ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা থেকে তাদের আটক করে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিেতে র্যাব-৭ এ তথ্য জানায়।
আটক দুই সহোদর লিটন প্রকাশ বাবুল (৩৭) এবং মো. সুমন (৩২) ফেনী জেলার সদর থানার নোয়াবাদ এলাকার মৃত আতু মিয়ার ছেলে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, গত ২০ মে ২০০৪ ইং ভুক্তভোগীর স্বামী লিটন প্রকাশ বাবুল ও তার ভাই সুমন এবং অন্যান্য সহযোগী আত্মীয়স্বজনরা তার পিতা থেকে ১০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করলে ভুক্তভোগী টাকা প্রদানে তার গরিব পিতার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান। তখন স্বামী লিটন প্রকাশ বাবুল ও তার ভাই সুমন এবং অন্যান্য সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগীকে লাথি ও কিলঘুষি দিয়ে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে তার দুই কন্যা সন্তানকে রেখে ভুক্তভোগীকে মৃত ভেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগীকে স্থানীয় লোকজন মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে এবং দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ভুক্তভোগী শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও দীর্ঘ ১৮ বছর এই অমানবিক নির্যাতনের যন্ত্রনায় ভুগছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার বাদী হয়ে স্বামী লিটন প্রকাশ বাবুল ও তার আপন ভাই সুমন অর্থাৎ দেবরকে প্রধান আসামী করে এজাহারনামীয় ৫ জন এবং আরো অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামী করে ফেনী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত অমানবিক ও পাশবিক চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সে সময় সারাদেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
র্যাব জানায়, পরে মামলার আসামী লিটন প্রকাশ বাবুল এবং সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। বিচারকাজ চলাকালীন সময়ে ভুক্তভোগীর দেবর সুমন জামিনে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় এবং মূল আসামী স্বামী লিটন কখনোই গ্রেপ্তার হন নাই। আসামীরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ বিচারিক আদালত আসামীদের অনুপস্থিতিতে ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তারকে যৌতুকের জন্য হত্যার উদ্দেশ্যে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করার অপরাধে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ফেনী গত ২২ মার্চ ২০১১ ইং ভুক্তভোগীর স্বামী আসামী লিটন প্রকাশ বাবুল এবং মো. সুমনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমান প্রদান করেন।
র্যাব আরও জানায়, নারী নির্যাতন মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা আটক এড়াতে ছদ্মনাম ধারণ করে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানা এলাকায় অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব বৃহস্পতিবার (১১ মে) দিবাগত রাত ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
র্যাবের দাবি, আটক আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা উক্ত মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ১০ হাজার অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বলে স্বীকার করেন। আটক আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট থেকে আটক এড়াতে ছদ্মনাম ধারণ করে প্রায় দীর্ঘ ১৮ বছর নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেছে। শেষে কুমিল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এছাড়াও গোয়ান্দা তথ্যের ভিত্তিতে আরো জানা যায় যে, উক্ত এলাকায় তারা মাদকের খুচরা ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। আটক আসামীদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনএনিউজ/বিএম