বিএনএ, ঢাকা: পাবনার রূপপুরেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “পাবনাতেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।”
সোমবার (১১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক/বিজ্ঞানীদের বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বিজ্ঞানকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তিনি সদ্য স্বাধীন দেশে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত পরমাণু শক্তি কমিশন মানুষের স্বাস্থ্য পরিচর্যা অত্যাধুনিক নিউক্লিয়ার মেডিসিন প্রচলন করেছে। আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চেষ্টা করেছিলাম দক্ষিণে, কিন্তু দক্ষিণে আমাদের যে মাটি সে মাটি এত নরম, প্রত্যেকটা দিন আমরা দেখেছি আসলে সেখানে করা সম্ভব নয়। এখন যেখানে আমরা করেছি এটা বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার পর দ্বিতীয়টাও আমরা এই পাবনাতেই রূপপুরে করতে পারবো। দক্ষিণ অঞ্চলের প্রত্যেকটি দ্বীপে অ্যাটমিক এনার্জি থেকে লোক পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, মাটির দেখা হয়েছে আসলে যেখানে মাটি খুব নরম, ওখানে করা সম্ভব হবে না। আমি এখনই বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রীকে বললাম যে এটার কাজ আমাদের শেষ হবে, সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয়টা যাতে শুরু করতে পারি এখন থেকে আমাদের সেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমি এবং আমার বোন শেখ রেহানা টানা ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। আমরা বিদেশে রিফিউজি হিসেবে ছিলাম। ৮১ সালে দেশে ফিরে আসি। এরপর আমার একটাই লক্ষ্য ছিল যে, বাংলাদেশকে উন্নত করা, দেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। সেই প্রত্যয় নিয়েই আমি ফিরে এসেছিলাম। কিন্তু আমার চলার পথ এত সহজ ছিল না। কারণ আমার বাবা-মা’র খুনিদের বিচার হবে না বলে ইনডেমনিটি আইন পাস করা হয়েছিল। তখন খুনিদের রাজত্ব ছিল। যে যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের মা-বোনকে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। সেই যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশনজট। শিক্ষার পরিবেশটাই নষ্ট করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সাল যখন ক্ষমতায় আসি তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী নাই বলতে গেলে। এর ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার উপর আমরা জোর দিই। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিই। যাতে প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি মানুষের আকর্ষণ তৈরি হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষা আমাদের অত্যন্ত দরকার। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো গবেষণা। গবেষণায় কোনো বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো না। ৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে ১২ কোটি টাকা গবেষণায় বরাদ্দ দিই। বিশেষ করে কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব দিই। কারণ তখন আমাদের ত্রিশ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য ঘাটতি ছিল। তারপর থেকে প্রতি বাজেটে আমরা প্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া শুরু করি। এভাবেই আমরা কাজ করে যাই।
তিনি বলেন, গবেষণা ছাড়া কখনও কোনো কিছুতে উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না। আমরা কৃষির ওপর গবেষণার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম বলেই মাত্র ৩ বছরে (১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯) বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫৪ গবেষকের হাতে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও বিশেষ গবেষণা অনুদানের চেক দেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, ১৯ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুদান এবং ২৫ জনকে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফেলোশিপ দেওয়া হয়।
বিএনএ/এমএইচ, এমএফ/এইচমুন্নী