বিএনএ,চট্টগ্রাম: আজিজ, বশির ও ওসমান। তারা পেশাদার চোর। চুরির অপরাধে জেলও খাটে বেশ কয়েকবার। জেলখানায় সখ্যতা হয় স্বর্ণের কারিগর সুমন ধরের সাথে। তারা চারজনই জেলখানায় বসে চুরি করে চোরাই স্বর্ণ বিক্রয়ের পরিকল্পনা করে। আর জামিনে বের হয়ে সে পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু করেন চুরি। কিন্তু কোতোয়ালী থানা পুলিশের জালে ধরা পড়তে হয় তাদের।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার স্বর্ণ চোরকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৩ ভরি ১৫ আনা ২ রত্তি ওজনের ১টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বিষয়টি জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী থানার দক্ষিণকুল চরলক্ষা এলাকার নূর ইসলামের ছেলে আব্দুল আজিজ, রাঙ্গামাটি জেলার খাউখালী থানার আবুল কাশেমের ছেলে বশির প্রকাশ বাচ্চু প্রকাশ বশর, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার দীপাল ধরের ছেলে সুমন ধর, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার নারায়ন বিকাশ সাহার ছেলে সুমন সাহা।
পুলিশ জানায়, গত ১ অক্টোবর কোতোয়ালী থানাধীন ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায় হুমায়ুন মোরশদ সিদ্দিকী নামের এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনা ঘটে। তখন বাসাটিতে কেউ ছিলেন না। চোরের দল ৩৯ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৭০ হাজার টাকা, এক লাখ টাকা মূল্যের একটি আইফোন নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় হুমায়ুন মোরশদ সিদ্দিকী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা করলে পুলিশ তদন্তে নামে।
পুলিশ আরও জানায়, দীর্ঘ ৪ মাস তদন্তের পর চোরাই মালামাল বহনের কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশার চালক মুছাকে গ্রেপ্তার করেছিলাম আমরা। তবে তিনি চুরির ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে তেমন তথ্য দিতে পারেননি। পরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে চুরির ঘটনায় জড়িত আব্দুল আজিজকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন দক্ষিণকূল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর এলাকা থেকে বশিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে বায়েজিদের হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে সুমন ধরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুমন সাহাকে কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, গ্রেপ্তার আজিজ, বশির ও ওসমান পেশাদার চোর। তারা বেশ কয়েকবার চুরির অপরাধে জেল খাটে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার কয়েক মাস আগে জেলখানায় থাকা অবস্থায় সুমন ধরের সাথে জেলখানায় তাদের পরিচয় হয়। সুমন ধর তার প্রথম স্ত্রীর করা নারী নির্যাতন মামলায় জেলহাজতে ছিল। সে সুবাদে আসামিদের মধ্যে সখ্যতা হয়। আসামি সুমন ধর স্বর্ণের কারিগর। সে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ীভাবে স্বর্ণের কারখানায় স্বর্ণের কারিগর হিসেবে কাজ করে। সে মোতাবেক স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্তে তার ধারণা আছে। জেলখানায় বসে তারা চারজনই চুরি করে চোরাই স্বর্ণ বিক্রয়ের একটি পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুদিন পর তারা সকলে জামিনে বের হয়ে একে অপরের সাথে সাথে যোগাযোগ শুরু করে। আসামি সুমন ধর অন্যান্য আসামিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে স্বর্ণ চুরি করতে প্রলুব্ধ করত। আসামি আজিজ, বশির ও ওসমানগণ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাসা/বাড়ি রেকি করত। তারা প্রথমে দেখত যে বাসার লোকজন অন্যত্র কোথাও বেড়াতে গিয়েছে কিনা বা বাসার কোন লোক রাত্রিযাপন ছাড়া আছে কিনা। তারা যে বাসায় কোন লোকজন দেখত না, লোকজনের আনাগোনা দেখত না সে বাসা টার্গেট করত।
ওসি নেজাম উদ্দীন বলেন, টার্গেট মোতাবেক তারা সময় নির্ধারণ করে ৩ জন একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পনা করে দুইজন বাসার ভিতরে প্রবেশ করে আরেকজন বাইরে থেকে পাহারা দিত। চুরি শেষে তিনজন একসাথে হয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে চলে যেত। সেখানে গিয়ে আজিজ বা বশির এর বাসায় গিয়ে সুমন ধরকে ফোন দিলে সুমন ধর উক্ত স্থানে গিয়ে চোরাই স্বর্ণালংকার নিয়ে সুমন সাহার কাছে নিয়ে তা গলিয়ে ফেলত। পরবর্তীতে গলিত স্বর্ণ কম দামে বিক্রি করতো। এছাড়া আসামি আজিজ, বশির, ইউসুফ এভাবে নগরীর সদরঘাট, কোতোয়ালী এলাকায় আরো ৫ থেকে ৭টি চুরি করেছে করেছে বলে স্বীকার করেছে।
বিএনএনিউজ/মনির