25 C
আবহাওয়া
২:১৪ পূর্বাহ্ণ - মে ১০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৯ (রাজবাড়ী -১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৯ (রাজবাড়ী -১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৯ (রাজবাড়ী -১

বিএনএ,ঢাকা —বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে রাজবাড়ী -১ আসনের হালচাল।

YouTube player

রাজবাড়ী -১ আসন 

রাজবাড়ী -১ সংসদীয় আসনটি গোয়ালন্দ উপজেলা এবং রাজবাড়ী সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২০৯ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন ঃ আওয়ামী লীগের আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ১ শত ৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল খালেক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৪ শত ৮৯ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঃ বিএনপির অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচনঃআওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিজয়ী হন 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ শত ৫৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৯ শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির গোলাম মোস্তফা । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৮ শত ৮১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচনঃ বিএনপির আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯ শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ২ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৫৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচনঃআওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিজয়ী হন 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ১ শত ২৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫ শত ৮২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৮ শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮২ হাজার ৮ শত ৭৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনঃ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিজয়ী হন 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনঃ আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬ শত ১৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯ শত ৫৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম খান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯ শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৩ হাজার ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর রাজবাড়ী-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজবাড়ী-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬২.০৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৬০%, বিএনপি ২৬.২৮%, জাতীয় পার্টি ১১.৫৪% জামায়াত ইসলামী ৮.৯২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৪.৬৬%ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৬১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.২২%, বিএনপি ২৪.৫৫% জাতীয় পাটি ২৯.০৬%, জামায়াত ইসলামী ৩.৬৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৫২% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৭০ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.০৫%, ৪ দলীয় জোট ৪৮.২২%, জাতীয় পার্টি ৭.৫১ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.২২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৮০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৭২%, ৪ দলীয় জোট ৩৫.৪১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৮৭% ভোট পায়।

রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন রাজবাড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী মর্জি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও জেলা মহিলালীগের সভানেত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম নওয়াব আলী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ খালেক।

অপরদিকে, প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি মাঠে রয়েছে জাতীয় পার্টির নেতারাও। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু, জাতীয় পার্টির সমন্বয়কারী আক্তারুজ্জামান হাসান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহাদত হোসেন মিল্টন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজবাড়ি-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। তবে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিও কম নয়। সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যেম আসনটি ফের আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী হলেও দলীয় কোন্দল রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তা প্রকট হচ্ছে। একই অবস্থা বিএনপিতেও। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২০৯ তম সংসদীয় আসন (রাজবাড়ি-১) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ /শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ 

আরো পড়ুন –দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০৮ (নারায়ণগঞ্জ-৫)

Loading


শিরোনাম বিএনএ