28 C
আবহাওয়া
৩:০৫ অপরাহ্ণ - মে ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দেশে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার  প্রবণতা বাড়ছে

দেশে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার  প্রবণতা বাড়ছে

আত্মহত্যা

বিএনএ ডেস্ক: দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বাড়ছে বলে বেরিয়ে এসেছে আঁচল ফাউন্ডেশন নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে। এই আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে। বিষয়টি আশঙ্কাজনক মন্তব্য করে শিক্ষক, শিক্ষিকা, অভিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান: কোন পথে সমাধান?’- শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয় এক সংবাদ সম্মেলনে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত ডিআইজি, ইন্টেলিজেন্স প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ, হাইওয়ে পুলিশ। ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, এমডি (সাইকিয়াট্রি) এমবিবিএস। ডা. মো. শহীদুল ইসলাম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ ।

গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০১ এবং ২০২২ সালে দেশে আত্মহত্যাকারী মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩২। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর দেশের ১০৫টি জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহকৃত তথ্য অনুসারে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই আট মাসে ৩৬১ জন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত আট মাসে গড়ে প্রায় ৪৫.১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। যেখানে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩০ জন। ৩৬১ শিক্ষার্থীর মাঝে পুরুষ শিক্ষার্থী ছিলেন ১৪৭ জন। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থী ছিলেন ২১৪ জন। একই সময়ে ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা। ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর ৫৯.৩০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী গত আট মাসে আত্মহত্যা করেছে । অন্যদিকে ৪০.৭০ শতাংশ পুরুষ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। শুধু নারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ বিবেচনায় দেখা যায় ২৬.৬০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী অভিমান, প্রেম ঘটিত কারণে ১৮.৭০ শতাংশ, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮.৪০ শতাংশ, পারিবারিক বিবাদের কারণে ৯.৮০ শতাংশ, ৫.১০ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির কারণে এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২.৬০ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে।

২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে আত্মহত্যা করেছে ৩১.৩০ শতাংশ। খুলনা বিভাগে আত্মহত্যা করেছে ১৩ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪.১০ শতাংশ। রংপুর বিভাগে আত্মহত্যা করেছে ৮.৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহে আত্মহত্যা করেছে ১০ শতাংশ এবং রাজশাহীতে আত্মহত্যা করেছে ১১.৯০ শতাংশ এবং বরিশালে আত্মহত্যা করেছে ৮.৩০ শতাংশ। এছাড়া সিলেটে আত্মহত্যা করেছে ২.৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ঢাকা শহরে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ না থাকায় এখানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে।

আত্মহত্যার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে জানানো হয়, আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক দল আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখেছেন শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ৩১.৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৫৭ জন এবং সমসংখ্যক পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া আত্মহত্যা করার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন- প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, একাডেমিক চাপ, মানসিক অস্থিতিশীলতা, পারিবারিক সমস্যা এবং অন্যান্য।

আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্তর বিবেচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর ৪৬.৮ শতাংশই ছিল স্কুলগামী। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিল ১১২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ছিল ৫৭ জন।

আত্মহত্যাকারীদের বয়সভিত্তিক বিবেচনায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা। ৬৭.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিল এই বয়সী। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিল ১৫৯ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী ৮৪ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

আত্মহননকারী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৩.৩০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী ছিল আর পুরুষ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ছিল ৪৬.৭০ শতাংশ। আত্মহত্যাকারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ শতাংশের পেছনে দায়ী ছিল অভিমান। রোমান্টিক সম্পর্কের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৩.৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশের আত্মহত্যার পেছনে যৌন নির্যাতন দায়ী।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে গবেষণায় যেসব সুপারিশ করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে আত্মহত্যা মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে একটি টোল ফ্রি জাতীয় হটলাইন নম্বর চালু করা, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবেগীয় অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতার পাঠ শেখানো, শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কৌশল, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানো। সেই সঙ্গে পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি এবং তাদের প্রয়োজনে সাড়া প্রদান, আত্মহত্যার সতর্কতা চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা বিস্তৃত করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রয়োজন প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর সব শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করা।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ/ হাসনাহেনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ