বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের চন্দনাইশে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার সংবাদ প্রকাশ করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজিকে পিটিয়ে ভবনের দোতলা থেকে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় র্যাব অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে ঢাকার কমলাপুরের সর্দারপাড়া কলোনীর একটি ব্যাচেলর মেস থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারীর আব্দুল মোনাফের ছেলে মো. আলাউদ্দিন (৩৫) ও একই উপজেলার পূর্ব দোহাজারীর আবদুল ছবুরের ছেলে মো. ফারুক (২৬)। তারা দুইজনই হামলার সাথে জড়িত প্রধান আসামি।
হামলার শিকার সাংবাদিক আয়ুব মিয়াজী (৩২) একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় দৈনিকের চন্দনাইশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার জানান, সাংবাদিক আয়ুব মিয়াজী ওপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭ জানতে পারে হামলার সাথে জড়িত প্রধান দুই আসামি আলাউদ্দিন এবং ফারুক ঢাকার কমলাপুরের সর্দারপাড়া কলোনীর একটি ব্যাচেলর মেসে অবস্থান করছে। র্যাব অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে হামলার সাথে জড়িত ছিল বলে অকপটে স্বীকার করে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে সাংবাদিক মিয়াজী চন্দনাইশ সদরে দোহাজারী রেলস্টেশনসংলগ্ন ভবনের দোতলায় মিয়াজী কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কাজ করছিলেন। এ সময় সাত-আটজন সন্ত্রাসী হকিস্টিক, ছুরি, লাঠি নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি খালি রিকশার ওপর পড়েন মিয়াজী। পা এবং কোমরে গুরুতর আঘাত পান তিনি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তাঁর মাথা ও শরীরের কয়েকটি স্থানে হাড় ভেঙে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন।
সন্ত্রাসীরা আয়ুব মিয়াজী কম্পিউটার সেন্টারে পাঁচটি ল্যাপটপ ভাঙচুর করে এবং তিনটি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। ক্যাশবাক্সে থাকা ৫০ হাজার টাকা, ব্যবহারের দুটি মোবাইল ফোন, মূল্যবান কাগজপত্রও নিয়ে যায় তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার সংবাদ পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় নির্জন রাস্তায় দাঁড়ানো একটি রিকশার ওপর হঠাৎ ওপর থেকে একজন পড়ে গেলেন। রিকশার একপাশে বাড়ি খেয়ে তিনি রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়েন। এরপর পথচারীদের তাঁর কাছে ছুটে আসতে দেখা যায়। তবে লোকটিকে নিথর পড়ে থাকতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, আয়ুব মিয়াজী সম্প্রতি পূর্ব দোহাজারী এলাকায় রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার সংবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানান এবং একটি অনলাইন পোর্টালে সংবাদ করেন। এ নিয়ে একটি পক্ষ ক্ষিপ্ত ছিল। গত ৪ এপ্রিলের ঘটনা সেই ক্ষোভ থেকেই ঘটানো হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
বিএনএ/এমএফ