ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম-আবদুল জলিল ও মাতার নাম-আমেনা খাতুন। তিনি ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন।
১৯৪৮ সালে পাবনায় এবং পরবর্তীকালে ১৯৫১ সাল থেকে ঢাকায় ভাষা-আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালের পর ভাষা-আন্দোলনে ভাটা দেখা দেয়াতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে জনাব মতিনের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় এবং তিনি তাঁর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। এই বিশ্ববিদ্যায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বায়ান্নর আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য যে ক’জনের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সাথে আবদুল মতিনের নামটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়ে আছে। তিনি ‘ভাষা মতিন’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।
আবদুল মতিন বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বভাবতই তিনি আন্দোলনকে সংগঠিত করার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মতৎপর ছিলেন। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের ২০ ফেব্রুয়ারির নবাবপুরের মিটিং-এ যে চারজন ২১ ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে ভোট দেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৪৮ সালে কার্জন হলের কনভোকেশন সভায় আবদুল মতিন অন্যদের সঙ্গে জিন্নাহ সাহেবের রাষ্ট্রভাষা উর্দুর স্বপক্ষে বক্তব্যের পর ‘নো, নো’ বলে প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯৫২ সালে মার্চের প্রথম দিকে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি কারাবরণ করেন। আবদুল মতিন বায়ান্নর মাচের্ গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ একবছর পর ১৯৫৩ সালের মার্চে মুক্তি লাভ করেন।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(৮) আলী আছগর, ডা. পর্ব: ০২