বিএনএ, চট্টগ্রাম: ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ও অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। এসময় আইনজীবি নেতারা বলেন আদালত চত্বরে ইসকনের তাণ্ডব আমাদের বাকরুদ্ধ করেছে। ইসকন সন্ত্রাসী সংগঠন। ইসকন নিষিদ্ধের বিষয়ে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ।
রোববার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় চার্জশীট প্রদান করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের অনুসারীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে, লাঠিপেঠা করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও তার প্রাণহীন দেহের উপর পৈশাচিকভাবে আঘাত করতে থাকেন।
এমন নজিরবিহীন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড বিভিন্ন মিডিয়া ও আপনাদের মাধ্যমে সারাবিশ্ব ও বাংলাদেশের জনগণ অবলোকন করেন এবং স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ ও হতবাক হয়ে যান। দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষ দেশব্যাপী এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠন আদালতে কর্মবিরতি পালন, প্রতিবাদ সমাবেশ, শোক র্যালি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। দেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ হত্যাকান্ডের তদন্ত ও দ্রুত যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
সিনিয়র আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, অ্যাডভোকেট আলিফের হত্যাকাণ্ডের পর তার পিতা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা, তার ভাই বাদী হয়ে একটি ফৌজদারি মামলা, পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলাসহ ইতিমধ্যে মোট ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ মামলাগুলোর বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। আমরা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বলে আসছি ওই দিনের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার সময় আদালত এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় সন্ত্রাসীরা এহেন নির্মম হত্যাকাণ্ড, মসজিদ, আদালত, ল’ চেম্বার, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের গাড়ি, দোকানপাট ভাংচুর করার সুযোগ পেয়েছিল। আদালত অঙ্গণে দীর্ঘসময় চিন্ময় দাসকে প্রিজনভ্যানে রাখা হয় এবং তিনি প্রিজনভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তার অনুসারীদের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার নির্দেশ দেন। যার ফলশ্রুতিতে আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংগঠিত হয়। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জকে বদলি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে ১১টি দাবি তুলে ধরে আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত যেসব ইসকনের সন্ত্রাসী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি তাদেরকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। মসজিদ, আইনজীবীদের চেম্বার, গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলাসমূহে অন্যতম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, হত্যাকাণ্ডে দায়েরকৃত মামলাসমূহের চার্জশীট প্রদান করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থা করা, ঘটনার দিন আদালত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকারীদের পক্ষে কোনো বিজ্ঞ আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, নির্মম ও পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে সকল প্রকার অপপ্রচার ও চক্রান্ত থেকে বিরত থাকার জন্য দেশি-বিদেশি সব মহলের প্রতি উদারথ আহ্বান জানাচ্ছি, শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার, নিরাপরাধ কোন ব্যক্তিকে হয়রানি না করা, আদালত অঙ্গনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, আদালত অঙ্গনের সুদীর্ঘকালের সৌহার্দপূর্ণ সম্প্রীতি বজায় রাখা ও সহঅবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আলিফের হত্যাকারীদের পক্ষে কোনো বিজ্ঞ আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে হত্যা মামলার একটি নিয়ম আছে, হত্যা মামলার কোর্ট যখন চলবে তখন কোর্ট নিজেই একজন আইনজীবী নিয়োগ করবেন আসামিপক্ষে। এটাকে স্টেট ডিফেন্স বলে। আলিফ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে বাইরের আইনজীবী দাঁড়ালে বাধা দেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কেউ আসামিপক্ষে লড়াই করলে তা হবে আলিফের রক্তের সঙ্গে বেঈমানির শামিল। এছাড়া কোনো আইনজীবী আদালত চত্বরে হামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে আসতে পারছেন না এমন কোনো অভিযোগ সমিতিতে করেননি।
মামলায় কয়েকজন আইনজীবী আসামির বিষয়ে নাজিম উদ্দীন বলেন, কোনো আইনজীবী নিরাপত্তাহীনতায় আছে এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। আবার মামলায় আসামি হওয়া অধিকাংশ আইনজীবীই আদালতের কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা প্রোপ্রাগাণ্ডা চালাচ্ছে। ভারত গত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতি একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। সেটা হারিয়ে যাওয়ায় এখন তারা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করছে। সেখানে আমাদের আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রিগান আচার্য ও অ্যাডভোকেট শুভাশিষের ছবি এডিট করে জঘন্য মিথ্যাচার করা হয়েছে। তারা কোনো ধরণের আহত ও হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি। তাদের নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি মো. আবদুল কাদের, সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহফুজুর রহমান খান, সহ সাধারণ সম্পাদক মো. কাশেম কামাল, অর্থ সম্পাদক কাজী মো. আশরাফুল হক আনসারী জুয়েল, পাঠাগার সম্পাদক আহমেদ কবির করিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মারুফ মো. নাজেবুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক হাবিবুর রহমান, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক অভিজিত ঘোষ, সদস্য শাহ ইমতিয়াজ রেজা চৌধুরী নিশান ও আবদুল্লাহ আল ফাহাদ প্রমুখ।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/এইচমুন্নী