বিএনএ,ডেস্ক : সুইজারল্যান্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ৭ নভেম্বর জেনেভা সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে দূতাবাসের প্রটোকলে তিনি গাড়ি করে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে আসিফ নজরুলকে ঘিরে ধরেন আওয়ামী লীগের কতিপয় সমর্থক। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে মিথ্যাবাদী, পুলিশ হত্যাকারি, রাজাকার, পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, অনির্বাচিত, জবর দখলদারসহ নানা অশালীন শব্দ ও বাক্যবানে হেনস্তা করেন।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন উপদেষ্টা বেশ শান্ত ছিলেন এবং তাদেরকে আলোচনা করার জন্য আহ্বান জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে শোনা যায়- আসিফ নজরুল বলছেন, ‘আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? গায়ে হাত দিবেন না’। প্রায় ৭ মিনিটের বেশি সময় ধরে আসিফ নজরুলের পথ অবরোধ করে তার সঙ্গে উত্তেজিত ভাষায় তর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। এই সময় আইন উপদেষ্টাকে কালো পতাকা প্রদর্শনও করা হয়। হেনস্তাকারীদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। আসুন ফিরে দেখি, সেদিন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কী ঘটেছিল?
জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, আইন উপদেষ্টা ব্যক্তিগত কোনো সফরে সুইজারল্যান্ড আসেননি। তিনি আইএলও গভর্নিং বডির মিটিংয়ে এসেছেন। আইএলওতে বাংলাদেশের দুটি মামলা চলছে। তিনি আইএলও’র মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশে ফেরার জন্য বিমানবন্দরে প্রবেশের পথে কিছু লোক উপদেষ্টার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হেনস্তার প্রতিবাদে মশালমিছিল করেছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে মশালমিছিল করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মিছিল শেষে তাঁরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ সুইজারল্যান্ডে আসিফ নজরুলকে হেনস্তার নিন্দা জানান। তাঁর অভিযোগ, জেনেভায় আসিফ নজরুলকে হেনস্তাকারীরা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী। হেনস্তাকারীদের পাসপোর্ট বাতিল এবং তাঁদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আবু হানিফ। আসিফ নজরুলের সফরসূচির কথা হেনস্তাকারীরা কীভাবে জানলেন, সেটা বড় প্রশ্ন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্রান্সে যাওয়ার পথে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কতিপয় আওয়ামী দুস্কৃতিকারীরা উদ্ধত আচরণ করে। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে এহেন শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ শুধু অনভিপ্রেতই নয় বরং দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের হিংস্র রুপের প্রকাশ এখনো দেশে-বিদেশে অনেক স্থানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রবাসে আওয়ামী নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অবয়ব ধারণ করে সুযোগ পেলেই গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের উশৃঙ্খল আচরণে আবারও প্রমাণিত হলো এরা বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, বিভাজন, সংকীর্ণতা, অনৈক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির হরিলুট এবং বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারসহ অসৎ অনাচারের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার, হত্যা ও গুমের রাজনীতির বিশ্বাস থেকে সরে আসেনি। এরা গণতন্ত্র স্বীকৃত মানবাধিকার, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব