বিএনএ, ঢাকা : শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক বছর পার হতে না হতেই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের স্টেক হোল্ডার রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে স্বার্থগত সংঘাত শুরু হয়েছে। ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কীনা তার নিয়ে জনমনে সংশয় সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এই অবস্থায় জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির দুইজন নেতা নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলম অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদে সরে যাওয়ার উপায় খুঁজছেন অভিযোগ করে বক্তব্য দিয়েছেন । হঠাৎ করে কেন তারা এই প্রসঙ্গ তুললেন সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।
প্রথমে গত ৪ঠা অক্টোবর এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম একাত্তর টেলিভিশনে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে লিঁয়াজো রেখেছে এবং তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথাও ভাবছে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চল মূখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম আরেক কাটি সরস। গত ৮ই অক্টোবর নওগায় দলীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, উপদেষ্ঠারা কোথায় সেফ এক্সিট নেবেন, পৃথিবীতে সেফ এক্সিট নামের একটাই জায়গা, সেটা হচ্ছে মৃত্যু। এ ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তে যান, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে ধরবে।
‘সেফ এক্সিট’ প্রশ্ন তুললেও নাহিদ কিংবা সারজিস সুনির্দিষ্ট করে কোনো উপদেষ্টার নাম বলেননি। ফলে জনমনে কৌতহল বেড়ে চলেছে
এদিকে, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ কী সত্যিই সেফ এক্সিট খুঁজছে বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেছেন, “নাহিদ ইসলামের বক্তব্যটা স্পেসিফিক হলে হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলা যেত। এখানে তো সরকারের বক্তব্য দেওয়ার তো সুযোগ নেই।”
কেন, কোন প্রেক্ষাপটে ‘সেফ এক্সিটের’ কথা আনলেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা তা নিয়ে নানা জনের নানামত।
এনসিপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ নিয়ে এবছর মে মাসের দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের আন্দোলনের পর থেকেই মূলত অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
পরবর্তীতে যখন প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করেন, তারপর থেকে সরকারের দুই থেকে তিনজন উপদেষ্টা বিএনপির সাথে সখ্য গড়ে তুলছেন। ওই উপদেষ্টাদের ‘পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের’ কারণে জুলাই সনদ নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে।
এনসিপি নেতাদের অভিযোগ, উপদেষ্টাদের আরেকটি অংশ জামায়াতের সাথেও সখ্য বজায় রেখে তাদের ‘নিরপেক্ষতা’ হারিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি এনসিপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আলোচনা পরই বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আনছেন এনসিপি নেতারা।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেই ছাত্র নেতৃত্বের পরামর্শ রেখেই এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তারাই কেন উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট নিয়ে অভিযোগ তুলছে সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভোটের আগে এই প্রশ্নগুলো নতুন করে সংকট তৈরি করতে পারে।
সেইফ এক্সিট ইস্যুতে যখন দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল তখন আগুনে ঘি টেলে দিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। বুধবার ঐক্যমত কমিশনের বৈঠক থেকে বের হয়ে তিনি বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ৫ জন উপদেষ্টা হাত মিলিয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তবে তিনি কোন উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করেননি। রাশেদ খানের এই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণরা বলছেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার সম্প্রতিককালে বেশামাল হয়ে পড়েছেন। বিদায়ের আগে উপদেষ্টারা নানা অনিয়ম দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তার প্রমাণ ওঠে আসে গত ৪ঠা অক্টোবর দৈনিক মানবজমিনের ‘প্রফেসর ইউনূস নিজের রের্কড নিজেই ভাঙ্গলেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে। এতে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের লাগামহীন দূর্নীতির ভয়াবহ এক চিত্র তুলে ধরা হয়। মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান লিখেন, প্রফেসর ইউনূস হয়তো জানেন না- আজকাল আলোচনার টেবিলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের নামও যুক্ত হচ্ছে।
অতিসম্প্রতি একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগদানের জন্য ৮০ কোটি টাকা দাম উঠেছে। বলা হয়েছে, এই নিয়োগ সম্পন্ন হলে একটি বিশেষ স্থানে যাবে ৪০ কোটি। বাকি ৪০ কোটি পাবে তৃতীয়পক্ষ। আর যাকে নিয়োগ দেয়া হবে তার কিছুই করতে হবে না।
শুধু বাণিজ্যের কারসাজিতে সায় দিয়ে যাবেন বিনাদ্বিধায়। প্রশাসনিক ক্যাডারের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবে রাজি হননি আখেরের কথা ভেবে। এরপর কী হয়েছে জানা যায়নি। এসব খবর সচিবালয়ে চাউর হয়ে আছে। বেশ কিছু খবর বার্তাকক্ষেও পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে চমক লাগানো বক্তব্য হাজির করে প্রফেসর ইউনূস জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন। তবে অতীত আর কোনোদিনই বর্তমান হবে না। কিন্তু দিনের শেষে হিসাব মেলানো বড় কঠিন। সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘুষের রেট আরও বেড়েছে। এখন অনেকেই ঘুষ বলতে চান না। তাদের কথায়- রীতিমতো লুট হচ্ছে। যাইহোক ঘুরেফিরে প্রশ্ন উঠছে- জাতিসংঘে প্রতিনিধিদলে ১০৪ জনকে সফরসঙ্গী করার পেছনে কী যুক্তি ছিল। জবাবদিহিতা থাকলে হয়তো জানা যেত এর আসল কারণ। কিন্তু বাংলাদেশে তো জবাবদিহিতার মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই।
বিএনএনিউজ/সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।