29 C
আবহাওয়া
৫:১৩ পূর্বাহ্ণ - আগস্ট ৩, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » জনগণ পাশে না থাকলে দিল্লি পালাতে হয়, লন্ডনে থাকতে হয়!

জনগণ পাশে না থাকলে দিল্লি পালাতে হয়, লন্ডনে থাকতে হয়!


বিএনএ, ঢাকা : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, জনগণ যদি পাশে থাকে তাহলে দিল্লিতে পালাতে হয় না, লন্ডন থাকতে হয় না। জনগণ পাশে থাকলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে জন্ম এবং মৃত্যু হয়।’

মঙ্গলবার বিকালে মেহেরপুর জেলার গাংনী বাসস্ট্যান্ডে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি’র পদযাত্রার পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা পিন্ডির ওপরে, দিল্লির ওপরে, লন্ডনের ওপরে বা আমেরিকার ওপরে নির্ভর করতে চাই না। ‘আমরা বিশ্বাস করি ক্ষমতার উৎস দিল্লি নয়, লন্ডনও নয়। ক্ষমতার উৎস বসুন্ধরা নয়, এস আলম বা কোনও ব্যবসায়ী নয়। ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমাদের আগে যারা নেতৃত্বে ছিল তারা দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে আমোদ-ফুর্তি করেছে। তারা নিজেরা আমাদের বড় বড় জ্ঞান দিতো। অন্যের ছেলেকে দিয়ে রাজনীতি করাতো নিজের ছেলেকে বিদেশে পড়াতো। দুর্নীতির টাকায় বিদেশে পড়াশোনা করে, দেশে এসে নেতা হতো। এখন সময় এসেছে এই সব হাইব্রিড নেতাদের থেকে বেরিয়ে আসার।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কিছু রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়েছে রাজনীতিকে এবং এই নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে। তারা সংস্কার চায় না, বিচারও চায় না। অথচ তারা এখন নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চাচ্ছে। তারা যদি নির্বাচন চাইতো তাহলে সংস্কার এবং দ্রুত বিচার করতে চাইতো।

এদিকে পতিত ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মেশিনারির চাকা সচল হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপকে ‘মিডিয়া মাফিয়া’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, একটি মাফিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে তাঁর যৌক্তিক বক্তব্য ও অবস্থানকে কিছু সাংবাদিক ‘গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন।

বসুন্ধরার পক্ষে বিবৃতি দেওয়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতাদেরও কড়া সমালোচনা করেছেন হাসনাত। মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ এ কথাগুলো বলেছেন।

বসুন্ধরা গ্রুপকে ‘ভূমিখেকো, বহু বছর আগে থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও মিডিয়া মাফিয়া’ উল্লেখ করে হাসনাত বলেছেন, ‘আমি আমার বক্তব্যে যা বলার স্পষ্টভাবেই বলেছি এবং এখনো আবার স্পষ্টভাবেই বলছি, আমি ভূমিখেকো, বহু বছর আগে থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত, মিডিয়া মাফিয়া বসুন্ধরা গ্রুপের কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করেছি, যাতে তারা অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অপতথ্য ও ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করে এবং পেশাদার সাংবাদিকতায় মনোযোগ দেয়।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের স্বাধীন মিডিয়াকে কোনো হুমকি কখনো দেইনি, বরং আমি স্বাধীন মিডিয়ার পক্ষে একজন অ্যাডভোকেট সোচ্চার ব্যক্তি। কিন্তু স্বাধীনতার নামে ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্ল্যাটফর্ম দেওয়া এবং যে কারও বিরুদ্ধে ডিজইনফরমেশন বা অপতথ্য ছড়ানো হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।’

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, পতিত ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ‘মেশিনারির’ চাকা সচল হতে শুরু করেছে এবং দুঃখজনকভাবে এই সচল হওয়ার প্রক্রিয়াটা শুরু করেছেন চব্বিশের জুলাই–আগস্টে পতিত ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সাংবাদিকদের কেউ কেউ। ‘ভূমিখেকো’ ও ‘মিডিয়া মাফিয়া’ বলে পরিচিত বসুন্ধরা গ্রুপ ৫ আগস্টের আগে কীভাবে পতিত ফ্যাসিস্টদের শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছে এবং ৫ আগস্টের পর তারা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের বিরুদ্ধে যেভাবে সিরিজ ধারাবাহিক অপতথ্য ও ঘৃণামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, তার নিন্দা করে গত পরশু একটি বক্তব্য দিয়েছেন। ওই বক্তব্যে এই মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপটি যেভাবে পতিত ফ্যাসিস্টদের ফুটসোলজারদের তাদের পত্রিকাগুলোতে প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে, তার নিন্দা করেছেন এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুঁশিয়ার করেছেন, যেন এমন অপকর্ম থেকে সরে আসে।
গণমাধ্যমকে জুলাই অভ্যুত্থানের এক নেতার হুমকির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গত সোমবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব ভূঁইয়া। এ প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘একটি মাফিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে আমার এই যৌক্তিক বক্তব্য ও অবস্থানকে “মিডিয়ার প্রতি হুমকি” হিসেবে দেখাতে উঠেপড়ে লেগেছেন ৫ আগস্টের পর ওই মিডিয়া গ্রুপে চাকরি পাওয়া এমন কিছু সাংবাদিক, যাদের চব্বিশের অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবেই আমরা জানতাম।

৫ আগস্টের পর মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপটির অবৈধ টাকার কাছে আত্মা বিক্রি করে দেওয়া ওই সাংবাদিকেরা জাতীয় প্রেসক্লাবে থাকা তাঁদের পদবি ব্যবহার করে বসুন্ধরার পক্ষে এমন বিবৃতি দিচ্ছেন, যেখানে আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

জুলাই–আগস্টে যখন দেড় হাজারের বেশি ছাত্র–জনতাকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করছিল, তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতারা সেই গণহত্যার নিন্দা করে কোনো বিবৃতি দিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় প্রেসক্লাবের যে নেতারা আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে বিবৃতি দিলেন, তাঁরা কি কখনো বসুন্ধরা গ্রুপের মাফিয়া মিডিয়া আউটলেটগুলোর ছড়ানো ভুয়া খবরের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন? চব্বিশের গণহত্যায় উসকানিদাতা এই মিডিয়া গ্রুপের অপকর্মের নিন্দা করেছিলেন কখনো? বর্তমান যে নেতারা বিবৃতি দিচ্ছেন, তাঁরা অনির্বাচিতভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, নাকি শুধু নিজেরা কিছু পদ দখল করে আগের ফ্যাসিস্ট এনাবলার ও মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত হয়েছেন?’

৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিস্টদের দ্বারা নিপীড়িত কিছু সাংবাদিক মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপের পত্রিকায় চাকরি টিকিয়ে রাখতে তাঁর বিরুদ্ধে বিকৃত তথ্য দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর তাদেরই দেখানো পথে ‘আওয়ামী পলাতক ফ্যাসিস্টদের সহযোগী ও চব্বিশের হত্যা মামলার আসামি সাংবাদিকদের’ একটি গ্রুপ অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর বিপক্ষে বিবৃতি দেওয়ার সাহস পেয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হাসনাত।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল মূখ্য সংগঠক বলেন, ‘এটি অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। সেই বিবৃতি ওই মাফিয়া গ্রুপের পত্রিকাসহ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। “গণমাধ্যমকে হুমকির প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের বিবৃতি” শিরোনামের ওই খবরটিতে দেখা যাচ্ছে, স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে সৈয়দ বোরহান কবির, আবু জাফর সূর্য, নজরুল কবীরদের মতো আওয়ামী তথ্যসন্ত্রাসীদের নাম। এরা চব্বিশে ছাত্র–জনতা হত্যার পক্ষে বৈধতা উৎপাদনে রাত–দিন কাজ করে গেছে এবং এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে এখন পলাতক আছে।’

পোস্টের শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বসুন্ধরার মাফিয়া মিডিয়ার অপকর্মের পক্ষে দাঁড়াতে অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে কিছু সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনিদেরও বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী করছেন, যাঁরা একসময় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী ছিলেন। আমি এ বিষয়টিতে আমার উদ্বেগ জানিয়ে রাখলাম। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টকে শক্তিশালী করে তুলতে তথাকথিত সাংবাদিক নেতাদের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে রাখলাম লিখেন হাসনাত আব্দুলাহ।
শেখ হাসিনা ও তারেক জিয়ার সঙ্গে জনগণ নেই এবং জাতীয় প্রেসক্লাব নেতাদের উদ্দেশ্য এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এমন বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

বিএনএ/সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ