বিএনএ, চট্টগ্রাম: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক গতবছরে জারীকৃত আদেশের ন্যায় ২০২০-২০২১ করবর্ষের আয়কর রিটার্ণ,আপীল, ট্রাইবুনাল, হাইকোর্ট রেফারেন্সসহ বিভিন্ন আয়কর মামলার কার্যক্রমের সময় সীমা আয়কর অধ্যাদেশের ১৮৪জি ধারায় আগামী ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে কর অঙ্গনের অস্থিরতা ও করদাতাদের উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতি।
বুধবার(৯জুন)সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপরোক্ত বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সোলায়মান।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যানসহ কতিপয় কর্মকর্তাদের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত, খামখেয়ালিপনা সরকারের সাথে করদাতাদের দূরত্ব বাড়াচ্ছে। এরূপ কর্মকাণ্ড সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫(৬) ধারা মোতাবেক ব্যক্তি ও কোম্পানি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ছিল ৩০ এপ্রিল। এসময় অতিবাহিত হওয়ার মধ্যে দেশের করোনা মহামারি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফলে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে। যা ১৬ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় ২০২০-২০২১ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন ও আয়কর মামলার কার্যক্রমের সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার জন্য চট্টগ্রাম আয়কর আইনজীবী সমিতি দুই দফায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আবেদন করে। ঢাকা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন থেকেও সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়। এছাড়া কর আইনজীবীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশন (বিটিএলএ) ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি থেকেও এ বিষয়ে অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে।
৫ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত জরুরী পরিসেবা ব্যতীত আয়কর অফিসসহ সব অফিস সরকারি ছুটির আওতায় ছিল। ১৭ মে থেকে আয়কর অফিসকে জরুরী পরিসেবার আওতায় আনা হলেও বন্ধের মধ্যেই রিটার্ন দাখিলের সময় পেরিয়ে যায়। ফলে সংশ্লিষ্ট ৮২বিবি ধারায় আয়কর রিটার্নসমুহ আয়কর অফিস জমা নিচ্ছে না। ইতিমধ্যে আপিল, ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট রেফারেন্সসহ অন্যান্য আয়কর মামলাসমুহ নিষ্পত্তির সময়সীমাও পেরিয়ে যায়।
ইতিপূর্বে দাখিলকৃত সুষ্ট মামলাসমুহ একতরফাভাবে এবং আগের তারিখ দিয়ে নিষ্পত্তি করা ছাড়া আয়কর কর্মকর্তাদের অন্য কোন উপায় থাকছে না। সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে নতুন আপিল, ট্রাইব্যুনাল ও রেফারেন্স মামলা দাখিল করতে সমস্যা হচ্ছে। যার ফলে করদাতাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা অত্যন্ত দু:খজনক।
গত বছর করোনা মহামারীতে সৃষ্ট এরূপ সংকট উত্তরণের জন্য সরকার সংসদে পাশ করে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ তে ১৮৪জি ধারা সংশোধন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সময় বর্ধিত করার ক্ষমতা দেন। ওই ধারার অনুবলে গত বছর ৩০ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জারীকৃত আদেশ এর মাধ্যমে ২০১৯-২০২০ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন ও আয়কর মামলাসমুহের কার্যক্রমের সময়সীমা বর্ধিত করেছিল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী বর্ণিত অনিয়মের বিরুদ্ধে সুদৃষ্টি প্রদান করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের জারীকৃত আদেশের ন্যায় ২০২০-২০২১ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন, আপিল, ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট রেফারেন্সসহ বিভিন্ন আয়কর মামলার কার্যক্রমের সময়সীমা আয়কর অধ্যাদেশের ১৮৪জি ধারা অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে কর অঙ্গণে অস্থিরতা ও সম্মানিত করদাতাদের উৎকণ্ঠতা দূরীকরণ করত: রাজস্ব আদায়ে গতিশীলতা আনয়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ, সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান, মো. মাহফুজুল হক (মণি), মোস্তফা কামাল মনসুর ও সদ্য বিদায়ী সভাপতি মো. ওমর ফারুক, সাবেক সাধারন সম্পাদক সালাউদ্দীন চৌধুরী (শাহীন) ও সদ্য বিদায়ী সাধারন সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএনিউজ২৪/আমিন