বিএনএ ডেস্ক : দেশে নারীর ক্ষমতায়নের সূচক বেড়ে চলেছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরের মধ্যে বর্তমানে প্রশাসনে সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী দায়িত্ব পালন করছেন।মাত্র এক বছরে নারীদের সরকারি চাকুরিতে অংশগ্রহণের হার ৩ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে সরকারি চাকুরির ২৯ শতাংশই নারীদের দখলে। যা সংখ্যায় ৪ লাখ ৯ হাজার ১৩৯ জন। এখন একজন কর্মকর্তাকে নারী বা পুরুষ নয়, কর্মকর্তা হিসেবেই গণ্য করা হয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ৮ মার্চ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুপুর আড়াইটায় বিমানের ঢাকা থেকে দাম্মামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ওই ফ্লাইটে পাইলট থেকে কেবিন ক্রু- সব দায়িত্ব পালন করেছেন নারী কর্মীরা।
পাইলট হিসেবে ফ্লাইটটি পরিচালনা করেছেন বিমানের সিনিয়র ক্যাপ্টেন আলিয়া মান্নান ও ফার্স্ট অফিসার ফারিহা তাবাসসুম। এছাড়া ফ্লাইটের গ্রাউন্ড স্টাফ, ক্রুদের ব্রিফিং, চেক-ইন কাউন্টার, ফ্লাইট কভারেজ, ককপিট ক্রু হিসেবে যারা ছিলেন তাদের সবাই নারী।
বিমানের নারী কর্মীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিশ্ব নারী দিবসে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিমের নির্দেশনায় এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারী কর্মীরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ১৯৭৩ সালে কোনো নারী সচিব ছিলেন না। ১৯৯৪-৯৫ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন খোদেজা আযম। ২০১২ সালে ছয় জন নারী সচিব দায়িত্ব পালন করেন। গত এক যুগে নারী সচিবের সংখ্যা বেড়েছে ৬৬ শতাংশ।
সরকারের ৮৬ জন সচিবের মধ্যে নারী ১০ জন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবগণের তালিকায় এযাবত্কাল ২৪ জনের স্থান হলেও এক জনও নারী নেই । তবে আট বিভাগীয় প্রশাসকদের এক জন বা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। অতিরিক্ত বিভাগীয় প্রশাসকের ১৭ জনের মধ্যে দুই জন বা ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী। ৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে সাত জন বা ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের ২৬১ জনের মধ্যে ৬২ জন বা ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ৪৫২ জনের মধ্যে ১২৮ জন বা ২৮ দশমিক ৩২ জন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪১৬ জনের মধ্যে ১৪০ জন অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ নারীর দখলে।
২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কয়েকটি গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করলেও প্রতি বছরই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। সরকারি চাকুরিতে নারীর অংশগ্রহণ ২০১৮ সালে ছিল ২৭ শতাংশ। এরপর ২০১৯ সালে ২৮ শতাংশ, ২০২০ সালে ২৮ শতাংশ, ২০২১ সালে ২৬ শতাংশ হলেও ২০২২ সালে আবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ শতাংশে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের তথ্যমতে, ৩৭তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সুপারিশপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা। ৩৭তম বিসিএস এ নারী ছিলেন ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, ৩৮ তম বিসিএস এ ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, ৩৯তম বিসিএস এ ৪৭ শতাংশ, ৪০তম বিসিএস এ করোনাকালে কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশে, আবার ৪২তম বিসিএস এ ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে পুরুষের তুলনায় এগিয়ে যান নারী।লক্ষ্মীপুর, ফেনী, মানিকগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ঝালকাঠি, গাইবান্ধা ও মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক এবং গোপালগঞ্জ, শেরপুর ও খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপারের দায়িত্বে আছেন নারী।
তবে আগের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও সংসার রেখে শহরের বাহিরে না যাওয়ার মানসিকতা, সংসারের অনেক দায়িত্ব এখনো একা নারীকেই পালন করতে হয় বলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ছেন অনেক নারী।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, আগে সচিব পদে দুই-এক জন ছিলেন, এখন ১০ জন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারীদের সুযোগ দিচ্ছেন বলেই নারীরা দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছেন। তিনি বলেন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে, মানুষ এখন এসব পদে নারীর উপস্থিতি মেনে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম মনে করেন সচিব পর্যায়ে ১১ শতাংশ এবং সরকারি পর্যায়ে ২৯ শতাংশ নারী আমাদের অনেক বড় অর্জন। তিনি বলেন, নারীকে প্রতিনিয়তই নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে হচ্ছে। নারীরা এখনো একজন পুরুষের তুলনায় সাত গুণ বেশি সংসারের কাজ বা সেবা কাজে যুক্ত রয়েছেন। তারপরও নারী তার প্রাপ্য সম্মান পান না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি মনে করেন এই নারী নেত্রী ।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি