20 C
আবহাওয়া
১০:১৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিনা অপরাধে কারাগারে তিন বছরের শিশু!

বিনা অপরাধে কারাগারে তিন বছরের শিশু!

বিনা অপরাধে কারাগারে তিন বছরের শিশু!

বিএনএ, বরিশাল: অস্ত্র ও মাদক মামলার আসামি হয়ে কারাগারে গেছেন মা। আর তাই বিনা অপরাধেই মায়ের সঙ্গে কারাগারে যেতে হয়েছে ৩ বছরের শিশু মৌকে। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার কানুদাশকাঠি গ্রামে বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অভিযান চালিয়ে বসতঘর থেকে দেশীয় একটি পিস্তল, ১০ রাউন্ড তাজা গুলি ও ১৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরর গোয়েন্দা শাখার একটি দল। এ সময় উপজলার গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাশকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আলামিন হোসেনের বসতঘর থেকে তার স্ত্রী মো. রোজিনা বেগমকে (২৮) আটক করা হয়।

ওই সময় রোজিনার সঙ্গে ৩ বছর বয়সী নুসরাত ফারিয়া মৌ ওরফে জামিলাকেও নিয়ে যায় অভিযান পরিচালনাকারী দল। রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার হেফাজতে মায়ের সঙ্গেই ছিল শিশু মৌ।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে তাকে রাজাপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে পুলিশ ওই শিশুসহ তার মা অভিযুক্ত রোজিনাকে হাজতে আটক রাখে।

এরপর রোজিনাকে প্রধান আসামি এবং তার স্বামী আলামিন হোসেনকে ২ নম্বর আসামি করে বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক ইশতিয়াক হোসেন রাজাপুর থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরে পুলিশ ওই মামলায় রোজিনাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠি আদালতে পাঠায়। এ সময়ও শিশু মৌ মায়ের সঙ্গে ছিল।

গ্রেপ্তার রোজিনার খালা ও কানুদাশকাঠি গ্রামের কৃষক সিদ্দিক হোসেনের স্ত্রী খাদিজা বেগম অভিযোগ করে জানান, থানা হাজতে অনেক গরম। শিশু মৌ গরম সহ্য করতে না পেরে এবং বাইরে বের হয়ে খেলাধুলার জন্য সকাল থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টা কান্নাকাটি করেছে। তাকে বাইরে কোলে নিয়ে ঘুরতে চাইলেও পুলিশ তা দেয়নি। শিশুটি মাকে ছাড়া থাকতে পারে না।

আরও পড়ুন: টেকনাফে ইয়াবাসহ দুই কারবারি আটক

রোজিনার ভাই বড় কানুদাশকাঠি মিয়াবাড়ির বাসিন্দা জুয়েল মিয়া অভিযোগ করে জানান, ষড়যন্ত্র করে ঘরে গুলি, অস্ত্র ও ফেনসিডিল রেখে তার বোনকে ফাঁসানো হয়েছে।

জুয়েলের দাবি, ‘যখন অভিযান চালায় তখন ঘরে খোঁজাখুঁজি করেও কিছু না পেয়ে অভিযানকারীরা এক ব্যক্তিকে ফোন দিয়ে কিছু না পাওয়ার বিষয়টি জানান এবং ফোনে তাকে গালমন্দও করেন। এ সময় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয় ড্রয়ারের নিচের তাকে রয়েছে। এরপর তারা এসব উদ্ধার করে। প্রতিপক্ষরা তাদের ফাঁসানোর জন্য ঘরের মধ্যে রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজনকে জানিয়েছে।’

রোজিনার বাবা বারেক মিয়া জানান, স্থানীয় তিনপক্ষের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে তাদের। ওই বিরোধের জেরে তার মেয়ে ও জামাইয়ের ঘরে কেউ অস্ত্র, গুলি ও মাদক রেখে ফাঁসিয়েছে।

জানতে চাইলে মামলা দুটির বাদী বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক (এসআই) ইশতিয়াক হাসান জানান, আসামি আলামিন বেনাপাল থেকে মাদক এনে বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করেন। তিনি এলাকার বড়মাপের মাদকের ডিলার। তার স্ত্রী রোজিনা বেগম মাদক বিক্রি করেন এবং তিনিই তাদের কাছে ফেনসিডিল বিক্রি করেছেন। তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে মাদকের ব্যবসা তিনিই চালান।

তিনি জানান, বর্তমানে বরিশাল অঞ্চলে ফেনসিডিলের চরম সংকট রয়েছে। এ কারণে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় এক বোতল ফেনসিডিল বিক্রি করা হচ্ছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র-গুলি উদ্ধারসহ রোজিনাকে আটক করা হয়। অল্পের জন্য রোজিনার স্বামী আলামিন পালিয়ে যায় বলেও জানান তিনি।

মামলা দুটির মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার এসআই আব্দুল মজিদকে এবং অস্ত্র আইনের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজাপুর থানার এসআই মামুনকে।

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় জানান, রোজিনাকে প্রধান আসামি করে অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ মামলায় তার স্বামী আলামিনকেও আসামি করা হয়েছে। রোজিনার নাম আগে কোনো মামলা না থাকলেও তার স্বামী আলামিনের নামে তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।

ওসি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে আসামি রোজিনাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শিশুটিও তার মায়ের সঙ্গে রয়েছে। আদালত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।

এদিকে ঝালকাঠি আদালতের জিআরও সুরমা আক্তার জানান, ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচএম ইমরানুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে আসামি রোজিনার সঙ্গে ওই শিশুকেও কারাগারে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে ওই শিশু তার মায়ের সঙ্গে কারাগারেই রয়েছে।

ঝালকাঠির কারাধ্যক্ষ (জেলার) আক্তার হোসেন শেখ জানান, রোজিনা নামের এক আসামির সঙ্গে তার শিশু কন্যাও বন্দি রয়েছে।

বিএনএনিউজ/ সাইয়েদ কাজল, বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ