বিশ্ব ডেস্ক : দীর্ঘদিনের হতাশার পর, ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করার জন্য টিকা তৈরির প্রচেষ্টা আবারও নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আগামী বছরে এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই আশাবাদ উদ্ভূত হয়েছে mRNA প্রযুক্তি এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি মেলানোমা ভ্যাকসিন, mRNA-4157, যা মডার্না এবং মার্ক যৌথভাবে উন্নয়ন করেছে এবং পরীক্ষাগুলোতে চমৎকার ফলাফল দেখাচ্ছে। ২০২৫ সালে আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ এই ভ্যাকসিনটি অনুমোদন করতে পারে।
অন্যদিকে, ব্রিটেনে এনএইচএস ক্যানসার ভ্যাকসিন লঞ্চ প্যাড নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এটি BioNTech-এর সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগ, যা হাজারো রোগীকে mRNA ভিত্তিক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই ভ্যাকসিনগুলো কোলোরেক্টাল, প্যানক্রিয়াটিক এবং মেলানোমা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহৃত হবে।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্যানসার ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে
ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্যানসার ভ্যাকসিন প্রতিটি রোগীর নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এই ভ্যাকসিনের লক্ষ্য হলো ক্যানসার কোষের অনন্য জিনগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে এটি সেগুলো চিনে এবং আক্রমণ করতে পারে। প্রথমে একটি বায়োপসি করা হয়, এরপর টিউমারের জিনগত সিকোয়েন্সিং, এবং ইমিউন সিস্টেম দ্বারা সনাক্তযোগ্য প্রোটিন তৈরি করতে পারে এমন মিউটেশনগুলো চিহ্নিত করা হয়। এরপর সেগুলোর লক্ষ্য করে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়।
এই পুরো প্রক্রিয়া মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব, যা সম্ভব হয়েছে মহামারির সময় mRNA প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতির মাধ্যমে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে সবচেয়ে কার্যকরী মলিকিউলার মার্কারগুলো চিহ্নিত করতে, যা ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করতে পারে।
খরচ ও অন্যান্য উদ্যোগ
যদিও এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল, তাই BioNTech এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে এমন “অফ-দ্য-শেল্ফ” ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে, যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর কাজ করবে এবং সাধারণ টিউমার মার্কারগুলোকে লক্ষ্য করবে।
এছাড়াও, ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার বা কেমোথেরাপির পাশাপাশি ভ্যাকসিনকে অ্যাডজুভেন্ট বা বুস্টার হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চলছে। এমনকি কিছু গবেষক মনে করেন, একদিন হয়তো ক্যানসার ভ্যাকসিন উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায়ও পরিণত হতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্যানসার ভ্যাকসিন অত্যন্ত লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করে, তবে এর জটিল উৎপাদন প্রক্রিয়া একে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। সামনের বছরটি এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। যদি সফল হয়, তবে এটি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি নতুন পদ্ধতি তৈরির জন্য কয়েক দশকের প্রচেষ্টার সার্থকতা প্রমাণ করবে। তবে অতীতের বহু ব্যর্থতার কথা মনে রেখে, গবেষকরা খুব সাবধানী এবং আশার পাশাপাশি বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন