বিএনএ, চবি: সাম্প্রতিক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর ভয়চে ভেলে বাংলা সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য পূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৭ জুন) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তারা।
মানববন্ধনে তারা বলেন, সাম্প্রতিক সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশলাফ আলী খান খসরু ভয়চে ভেলে বাংলা সংবাদ মাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সেখানে প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা লিখতে পড়তে জানে না তাদেরকে কিভাবে চাকরি দিব। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা সঠিকভাবে পাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তার মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বলেন, অবিলম্বে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীকে তার এই মিথ্যাচার ও আমাদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং প্রতিবন্ধী সমাজ ও জাতির কাছে তাকে এই বক্তব্য রাখার জন্য অবিলম্বে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। সর্বস্তরের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যে দাবিসমূহ রয়েছে তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসময় ১৩দফা দাবি তুলে ধরেন তারা। দাবিগুলো হলো, নবম গেজেটেড থেকে ২০তম গ্রেডের বেতন ভুক্ত সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্বশাসিত চাকরিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক গত ১৭.০৪.২০১৯ ইং তারিখে প্রকাশিত দশম গ্রেড ভুক্ত ৩৮নং শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে উত্তর পদ সমূহে কেবলমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে হবে, শিক্ষা ও চাকরির পরীক্ষায় অভিন্ন শ্রুতিলেখক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়ালেখা সমাপ্তি পরে থেকে চাকরিপ্রাপ্তি পর্যন্ত মাসিক ১০ হাজার টাকা করে বেকার ভাতা দিতে হবে, তীব্র মাত্রায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের সর্বাধিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সকল সরকারি স্বায়ত্তশাসিত আধা-স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে, বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধীদের চাকুরীর সুযোগ প্রদানে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বছরে অন্তত একবার সরকারি স্বায়ত্ত শাসিত আধা- স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি সহ সকল চাকরি বছরে কমপক্ষে একবার বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে, এক হাজার কোটি টাকায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের উদ্যোক্তা তহবিল গঠন করতে হবে, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরকে অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে, ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট গঠন এবং সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ইশারা ভাষা সেবা নিশ্চিত করতে হবে, একটি বাড়ি একটি খামার আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধা দিতে হবে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য (গুরুতর প্রতিবন্ধী) স্বাস্থ্য ও কেয়ারগিভার ভাতা চালু করতে হবে, সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পরিষদে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট করতে হবে। তাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না হলে সচেতন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুশিয়ারি দেন তারা।
মানববন্ধনে সমন্বয়ক সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম বলেন, একজন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা লিখতে পড়তে জানেনা তাদেরকে চাকরি কিভাবে দিব। আমরা এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। যে মন্ত্রণালয়ের কাজ দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি যখন এরকম একটা কথা বলেন তখন তার নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে আমাদের পক্ষে থেকে আমাদের উন্নয়নে কাজ করা। কিন্তু সেখানে তিনি আমাদের ব্যাপারে যে মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক বিবর্জিত। এরকম মস্তিষ্কবিকৃত একজন ব্যক্তির মন্ত্রণালয়ে থাকার কোনো যোগ্যতাই নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমাদের আবেদন থাকবে এরকম অযোগ্য, অপদার্থ ও কুলাঙ্গার প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খসরুকে ক্ষমা নয় বরং তাকে মন্ত্রণালয় থেকে বহিষ্কার করা হোক।
এছাড়া মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মাজেদুল হক মুন্না, ইউসুফ রোমান, মাইদুল ইসলাম, আল আমিন ও শিহাব ভুঁইয়াসহ আরও অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।
বিএনএনিউজ/সুমন বাইজিদ,বিএম