নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: অন্ত:দলীয় মারামারি ও কোন্দলে বিপর্যস্ত দেশের শীর্ষ বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গণ সংগঠনের সম্মেলনে মারামারি, সভায় বিরোধের জেরে মারামারিতে বারবার খবরে উঠে আসছে দলটির নেতাকর্মীদের নাম। এসব মারামারিতে বারবার উঠে আসছে একটি চক্রের নাম। সর্বশেষ এই চক্রের হাতে মারধরের শিকার হন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। দলটির সাম্প্রতিক সময়ের কর্মকাণ্ডে প্রশ্ন ওঠেছে সিপিবি কী নিষ্ক্রিয় না জিম্মি !
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য ও অপর একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ছত্রছায়ায় ১০-১২জনের একটি চক্রের হাতে সিপিবি নিষ্ক্রিয় বা জিম্মি হয়ে রয়েছে।
সিপিবি ও এর গণ সংগঠনগুলোর সম্মেলনকে ধরে সক্রিয় হয়ে ওঠে এই চক্রটি। সম্মেলনে নিজেদের অনুসারীদের বারবার নেতৃত্বে আসতে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই গত কয়েকবছর ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এই অংশটি। এরই ধারাবাহিকতায় গণসংগঠনগুলোতে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনা ঘটে। ২০১৭, ১৮, ১৯ ও ২০২০ এ পরপর ছাত্র ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠনে তাদের অনুসারীদের সঙ্গে দেশের অন্যান্য নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বহু নেতাকর্মী আহত হয়। গোপন সম্মেলন কক্ষের মারামারির খবর উঠে আসে গণমাধ্যমে। এছাড়া সম্মেলন পরবর্তী বিবাদে সংগঠনেও নেমে আসে স্থবিরতা।
এই চক্রের হাতে বিভিন্ন সময় হেনস্তার শিকার হন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শহীদুল্লাহ্ চৌধুরী, মানবিক ডাক্তারখ্যাত সিপিবি নেতা ফজলুর রহমান, সিপিবির ঢাকা কমিটির নেতা ডা. সাজেদুল হক রুবেল। এসব ঘটনায় উঠে আসে এই চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর নাম।
আরো জানা যায়, সংগঠনের বাইরে মিছিল-সমাবেশেও পুলিশের ওপর হামলা ও নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতেও উঠে আসে এই চক্রের নাম। ঘুরেফিরে সিপিবি সংশ্লিষ্ট সকল গণসংগঠনের সঙ্গে প্রশাসনের সংঘর্ষে আহতের তালিকাতেও থাকে তাদের নাম। এসবের পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম ও প্রেসরিলিজে নিজের নাম তোলানো।
এসব কাণ্ড ঘটিয়ে সিপিবি ও এর গণ সংগঠনে ‘সন্ত্রাসী চক্র’ হিসেবে নিজেদের আখের গোছাতে চায় চিহিৃত চক্রটি। এনিয়ে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে হয়েছে ক্ষোভের সঞ্চার।
জানতে চাইলে সিপিবির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট ও যারা মারধরের সঙ্গে জড়িত, তারা অনেক অপরাধ করছে। মইন জলির কাণ্ড সবাই জানে। মইন এর আগে পার্টি অফিসে পার্টির উপদেষ্টা দেশের শ্রমিক আন্দোলনের ত্যাগী মুখ শহীদুল্লাহ্ চৌধুরী ভাইকে অপমান করে, মানবিক ডাক্তার সিপিবি নেতা ডা. ফজলুর রহমানকেও লাঞ্ছিত করে, মইন কয়েকবার সংগঠনে ও সিপিবি অফিসের সামনে মহড়া দিয়েছে, ঢাকা কমিটির নেতা ডা. রুবেলের ওপর হামলা চালিয়েছিলো অনিক রায়রা, জলি তালুকদার পার্টি অফিসে অনশন করলো। অর্থ্যাৎ পার্টি অফিসে অবস্থান, মহড়া, মারধর, দুর্ব্যবহার করে যাচ্ছে এই ‘সন্ত্রাসী চক্রটি’। কিন্তু সভাপতির সায় থাকায় এই চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। সারা দেশে এটার চরম বিরুপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। এমন ন্যাক্কারজনক কলঙ্কে আমাদের মুখ দেখানোর জায়গা নেই। এখন আমাদের দরকার ছাত্র ইউনিয়ন ও পার্টিকে রক্ষা করা। এদের রাখলে পার্টি রক্ষা হবে না।
সিপিবির এই নেতা আরো বলেন, এই ঘটনায় সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চাইতে সিপিবি নিজেই বিপর্যস্ত সকলের কাছে এমন বার্তা যাচ্ছে। এছাড়া ফুক্কা কুল্লে নিজামিন ও হেফাজতের মতো স্লোগান ঢুকে গেছে সংগঠনে। এরা ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহকে অতিথি করতে চাপ দিয়েছিলো। কিন্তু ফয়েজ উল্লাহরা সেসব থামিয়ে দেন। এরা (বিশেষ চক্র) সংগঠনকে পার্টির আদর্শের বিপরীত ও উগ্রবাদী হটকারির লাইনে নিতে চায়। আমরা এখন পার্টি অফিসে অবস্থান নিবো। সিপিবি সভাপতিকে বলা হয়েছে ব্যবস্থা নিতে। ব্যবস্থা নেয়া না হলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। কিন্তু কোনভাবেই আমরা উগ্রতার পথে যাবো না। সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে আমরা এগোবো।
বিশেষ চক্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, আমি কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার। আমার সবার সঙ্গে সংযোগ আছে। ছাত্র ইউনিয়নেও আছে। আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম গতকাল। এখন পর্যন্ত কোনকিছুই জানি না। পার্টির মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনা হলে জানতে পারবো।
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতিকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মারামারির বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এটা জানেন পার্টির সভাপতি সম্পাদক। আমি এটা বলার এখতিয়ার রাখি না। বলবোও না।
এবিষয়ে জানতে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমকে ফোন করে প্রশ্ন করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে কল কেটে দেন।
বিএনএ বাংলানিউজ২৪/এস,এ,আই,এসজিএন