24 C
আবহাওয়া
৯:৪৬ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দিন দিন চিকিৎসা খরচ বাড়‌ছে

দিন দিন চিকিৎসা খরচ বাড়‌ছে


ঢাকা : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, স্বাস্থ্য খাতে ক্রমবর্ধমান বাড়তি ব্যয় দেশের পরিবারগুলোকে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে ফেলে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে চিকিৎসা খাতে ব্যয় বেড়েছে ২০২ শতাংশ। ফলে পারিবারিক ব্যয় অগ্রাধিকারে শিক্ষাকে ছাড়িয়ে গেছে স্বাস্থ্য খাত।

বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর প্রতিবেদন বলছে, শিক্ষায় প্রতি এক টাকা ব্যয়ের বিপরীতে পরিবারগুলোর স্বাস্থ্য ব্যয় ২০২২ সালে ৩.৬৬ টাকায় উঠেছে, যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ০.৮৪ টাকা। এ সময়ে পরিবারগুলোর সামগ্রিক ব্যয় গড়ে ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বেড়েছে ২০২ শতাংশ। বিপরীতে একই সময়ে শিক্ষায় গড় ব্যয় কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত বিবিএস জরিপের তথ্য বলছে, শিক্ষায় পরিবারগুলোর মাসিক গড় ব্যয় ৫৭৮ টাকায় নেমে এসেছে, যা মাসিক সামগ্রিক গড় ব্যয়ের মাত্র ১.৮৯ শতাংশ।

২০১৭ সালে পরিবারগুলো শিক্ষায় গড়ে ৮৩৬ টাকা বা পরিবারের সামগ্রিক ব্যয়ের ৫.৪২ শতাংশ ব্যয় করত।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য পরিষেবায় গড়ে মাসিক পারিবারিক ব্যয় ২০১৭ সালের ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২ হাজার ১১৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। মোট ব্যয়ের মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যয়ের অংশ ৪.৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অভ হেলথ ইকোনমিক্স-এর অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বাড়লে ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে থাকলে শিক্ষায় সাধারণত পরিবারের ব্যয় কমে আসে।
জরুরী প্রয়োজন বিবেচনায় পরিবারগুলো স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়কেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে মন্তব্য করে ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন-এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সংকটকালে শিক্ষায় ব্যয়ের বিষয়টি ‘পরবর্তীতে বিবেচ্য বিষয়’ হয়ে দাঁড়ায়।
অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে পারিবারিক পর্যায়ে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে বলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রায় ৩৭ শতাংশ পরিবার তাদের সংসার চালানোর জন্য ধার করছে। প্রতিটি পরিবারে গড়ে ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা ঋণ রয়েছে। ঋণগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে ১.১৩ শতাংশ মানুষ। আর মাঝারি ও গুরুতর পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আছে ২১.১১ শতাংশ মানুষ।
গত কয়েক মাসে সব ধরনের চিকিৎসা উপকরণ ও সেবার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ওষুধের দাম, হাসপাতালে ভর্তি ফি এবং সিট ও কেবিনের ভাড়া, ডাক্তারের ভিজিটসহ সব খরচ বেড়েছে।
বিবিএসের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোগীপ্রতি বাংলাদেশে চিকিৎসায় গড়ে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা করে ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে ডাক্তারের ভিজিটে ১৪২ টাকা, ওষুধে ৭৪৯ টাকা, টেস্টের ফি বাবদ ৩৭৯ টাকা এবং পরিবহনে ১০৭ টাকা করে ব্যয় করছেন রোগীরা।
ওষুধ কিনতে চিকিৎসার মোট ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ হলেও বিনামূল্যে সরকারি ব্যবস্থা এবং এনজিও থেকে ওষুধ পাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। এর ফলে আগের চাইতে বেশিসংখ্যক মানুষ বেসরকারি ফার্মেসি ও ডিসপেন্সারি থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ কমে আসায় বেসরকারি ক্লিনিক এবং হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। ২০১৫ সালে ৮.৬১ শতাংশ মানুষ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিত, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৯.১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিবারগুলোর আয়, ব্যয় এবং জীবনযাত্রার মানের তথ্য তুলে ধরতে পল্লি ও শহর অঞ্চল থেকে সমান হারে মোট ১৪ হাজার ৪০০টি নমুনা পরিবারের ওপর এই জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপে পাওয়া বিভিন্ন সূচকে পরিবর্তনের কারণ খুঁজে বের করতে হলে আরও ব্যাপক আকারের গবেষণার প্রয়োজন হবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

জিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ