বিএনএ ডেস্ক :বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলাম ধর্মের ব্যবহার নতুন নয়। রাজনীতিতে ইসলাম ধর্মের ব্যবহার বৃট্রিশ আমলে ১৯৪০ সালের জিন্নাহ’র দ্বিজাতি তত্ত্ব বা লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে। তার বিস্তার ঘটে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে। মওলানা ভাসনীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক পার্টি, মওলানা আতাহার আলীর নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম, হাজী দানেশ ও মাহমুদ আলি সিলেটির নেতৃত্বাধীন বামপন্থী গণতন্ত্রী দল এবং আবুল হাশিমের নেত্বাধীন খেলাফতে রব্বানী পার্টির সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্টের মার্কা ছিল নৌকা।

অপর দিকে মুসলিম লীগের মার্কা ছিল হারিকেন। নৌকার গণ জোয়ার ঠেকাতে ইসলামকে ব্যবহার করা হয়। নৌকা তথা যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিলে ‘বিবি তালাক হয়ে যাবে’ বলে ফতোয়া দেয়া হয়। কিন্তু মুসলিম লীগের এই ফতোয়া কাজে আসেনি বরং বুমেরাং হয়। নির্বাচনে মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৫টি আসন লাভ করে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন। মুসলিম লীগের এই ভরাডুবির পরও রাজনীতিতে ইসলামের ব্যবহার এতটুকু কমেনি। বরং এর মাত্রা আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা এবং নির্যাতনকে জায়েজ করার জন্য পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী ইসলামকে খুব খোলামেলাভাবে ব্যবহার করেছিল। পাকিস্তানি শাসকরা তাদের প্রচারে দাবি করেছিল, বাঙালিরা প্রকৃত মুসলিম নয়, তাদের সংস্কৃতি হিন্দুয়ানী, তারা ইসলামের শত্রু এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ধর্মীয় দায়িত্ব।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিখ্যাত পীর সাহেব শর্ষিণার পীর আবু সালেহ মোহাম্মদ জাফর, বাঙালি নারীদের ‘গনিমতের মাল’ হিসেবে ফতোয়া দেয়, সেই ফতোয়ার অংশ হিসেবে দেশে অত্যন্ত ভয়াবহ ধর্ষনের মহাযজ্ঞ শুরু হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ থাকলেও ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরির্বতনের পর আবারও পরাজিত শক্তির উন্থান হয়। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল জিয়া ‘পলিটিক্যাল পার্টি রাইট’ অধ্যাদেশ জারি করার পর ধর্মীয় দলগুলো আবারও রাজনীতিতে জায়গা করে নেয়। যার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান।
‘জুলাই ২৪’পরবর্তীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দক্ষিণপন্থী তথা ইসলামিক দল গুলোর দৌরাত্ম্য সীমাহীনভাবে বেড়ে যায়। যা অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলে দেয়।
অর্ন্তবীকালীন সরকারের বছরপূর্তিতে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। তার বিরুদ্ধে মাঠে নামে ইসলামপন্থী দলগুলো। তারা মানবাধিকার কমিশনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে মিছিল সমাবেশ, মানবন্ধন করে। গত ২৬ জুলাই শাপলা চত্বরে এক সমাবেশ থেকে অর্ন্তবর্তী সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন জৈনপুর দরবার শরীফের একজন পীর, হেফাজতে ইসলাম নেতা ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী।
হেফাযতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক শায়েখ মুফতি হারুন ইজাহার আরেক কাঠি সারেস। গত পহেলা আগষ্ট শুক্রবার চট্টগ্রামের জামিয়াতুল উলূম আল-ইসলামিয়া লালখান বাজার মাদ্রাসা মসজিদে মুসলমানদের উদ্দেশ্য বলেছেন, মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশের মদদপুষ্ট, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপন সমর্থন দিলে ইমান থাকবে না। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত উভয়কেই শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেন।
একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে সর্তক করেন নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এবং হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ইজহারুল ইসলামের পুত্র।
শায়েখ মুফতি হারুন ইজাহার, মসজিদে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রমকে সমর্থনকারিদের ‘ইমান’ থাকবে না বলে যে ফতোয়া দিয়েছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে, ঢাকায় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের আদৌ ‘ইমান’ আছে কীনা?
সৈয়দ সাকিব