বিএনএ, ঢাকা : আজ ১০ মহররম পবিত্র আশুরা। আশুরা শব্দের অর্থ দশম। ৬১ হিজরির আজকের দিনেই ফুরাত নদীর তীরবর্তী কারবালায় শহীদ হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)। তিনি হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমার (রা.) পুত্র। আশুরা বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন। পাপ মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে আশুরা।
কারবালার ‘শোকাবহ এবং হৃদয় বিদারক ঘটনাবহুল’ এই দিনটি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
ইতিহাস, শোক ও ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই দিনটি মুসলিম বিশ্বজুড়ে গভীর ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া মিছিল বের করে থাকে। তাদের উদ্যোগে সকাল ১০টায় পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান ইমামবাড়া থেকে বের হবে ১০ মহররমের প্রধান তাজিয়া মিছিল।
এ দিনটিতে বিশ্বের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও নামাজ-রোজাসহ বিভিন্ন নফল ইবাদত করে থাকেন। দিনটি উপলক্ষ্যে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) আয়োজন করেছে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এ উপলক্ষ্যে আজ রবিবার (৬ জুলাই) সরকারি ছুটির দিন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ জোহর ইফার উদ্যোগে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
হাদিসে এসেছে আশুরার রোজা পালনে বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহররম মাসে রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হিসাবে বিবেচিত হয়। আশুরার দিন এবং আশুরার আগের দিন (৯ তারিখ) অথবা পরের দিন (১১ তারিখ) মিলিয়ে দুটি রোজা পালনের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) নসিহত করেছেন। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।
তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি ও লাঠি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ আদেশ তাজিয়া মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলবত থাকবে। ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাজিয়া মিছিলে ধারালো ও বিপজ্জনক অস্ত্র বহন কিংবা আতশবাজি ব্যবহার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করে এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করে। তাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এসব সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আশুরার ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। আমি নবীজিকে রমজান ও আশুরার মতো গুরুত্ব দিয়ে অন্য কোনো রোজা রাখতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১/২১৮)
কিছু আমল এমন যা প্রিয় নবীজি কখনো ছাড়েননি। সেই আমলগুলোর একটি হলো আশুরার রোজা।
হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজি কখনো চারটি আমল ছাড়তেন না। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, প্রতিমাসের তিন দিনের রোজা এবং ফজরের আগের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ২৪১৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৬৩৩৯)
আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে নবীজি বলেন, রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পরে সর্বোত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। (সহিহ মুসলিম ১/৩৫৮)
প্রিয় নবীজি বলেন, আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি রোজাদারের অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১১৬২)
অপর এক হাদিসে নবীজি বলেন, রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১/১৫৭)
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।