বিএনএ ডেস্ক : ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় আরও দুইজনকে নজরদারিতে রেখেছে কলকাতার সিআইডি। এরা হচ্ছেন পিন্টু দাস ও সঞ্জয় লোহিয়া। ভারতীয় দন্ডবিধির ১৬১ ধারায় এ খুনের মামলায় সাক্ষী হিসেবে পিন্টু দাস ও সঞ্জয় লোহিয়া নামে দুই ব্যক্তির বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।
পিন্টু দাস শাহীনের পূর্বপরিচিত। কলকাতায় এলে পিন্টু দাশের গাড়ি ব্যবহার করতো সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের মাস্টার মাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন।পিন্টু দাস আনার হত্যাকান্ডে ব্যবহার করা চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি সরবরাহ করেছিল। জিহাদই এই সব নিয়েছিল। আপাতত দুই সাক্ষী পিন্টু দাস ও সঞ্জয় লোহিয়া কারাগারে গিয়ে অভিযুক্ত কসাই জিহাদ হাওলাদারকে শনাক্ত করেছেন। আখতারুজ্জামান শাহীন তার পিএস সিয়াম হোসেনকে ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি কেনার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ি সিয়াম হোসেন, পিন্টু দাস ও সঞ্জয় লোহিয়া ক্লোরোফর্ম ও চাপতি সংগ্রহ করে। কসাই জিহাদ হাওলাদারকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনে সিয়াম হোসেন।
এ দিকে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় কলকাতা সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কসাই জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেনকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন ভারতের বারাসত জেলা আদালত। ৫ জুন শুক্রবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত জেলা ও দায়রা আদালত এ নির্দেশ দেন। যদিও এদিন অভিযুক্তদের কাউকেই আদালতে প্রেরণ করা হয়নি। বর্তমানে তারা উভয়েই দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। সেখান থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আসামিদের বক্তব্য শোনেন এবং ১৯ জুলাই পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর বিশ্বাস। ওই দিন ফের তাদের আদালতে তোলা হবে। পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকায় অভিযুক্ত সিয়াম ও জিহাদ হাওলাদারকে ৫ জুলাই আদালতে হাজির করা যায়নি বলে আদালতকে জানায় কলকাতা সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ২৩ মে জিহাদকে আর ৭ জুন সিয়ামকে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা সিআইডি। দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪, ৩০২, ২০১ এবং ১২০বি -এর চার এ জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বারাসত আদালতের আইনজীবী আসলামুজ্জামান জানান, সিজেএম আদালত অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন এ দুই অভিযুক্ত জিহাদ ও সিয়াম । আপাতত: সেই জবানবন্দি সিল বন্ধ খামেই রয়েছে বলে জানান আইনজীবী আসলামুজ্জামান।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সে এমপি আনারকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহিনের নির্দেশেই জঘন্য এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় বলে জানা যায়। মূলত শাহিনের নির্দেশেই কসাই জিহাদ, সিয়াম হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী, শিমুল ভুইয়া, তার ভাইপো তানভীর ভুঁইয়া কলকাতার নিউটাউনের সন্জীবা গার্ডেন্সে এমপি আনারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেই সিয়ামের বিষয়টি সামনে আসে। মনে করা হচ্ছে, সংসদ সদস্য খুন ও খন্ডবিখন্ড লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিলেন এই সিয়াম। নিউটাউনের অভিজাত সঞ্জীবা গার্ডেন্সের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।
খুনের পর কসাই জিহাদই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে এবং সেগুলো ক্যারিব্যাগে ভরে রাখা হয়। পরে সেই লাশের টুকরোগুলো দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তারা। পরে ওই খালসংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করেন সিআইডির কর্মকর্তারা; যা দেখে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সেগুলো মানুষের হাড়। পাশাপাশি সঞ্জীবা গার্ডেন্সের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪ কেজি মাংস। উদ্ধারকৃত ওই মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে । সিএফএসএলের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী মাংসগুলো পুরুষ মানুষের। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট পায়নি সিআইডি।
যদিও সেই খন্ডবিখন্ড লাশ এমপি আনারের কি না, তা জানতে এবার ডিএনএ পরীক্ষা করবেন তদন্ত কর্মকর্তারা এবং সে লক্ষ্যে এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে। গত এক মাস ধরে যাবেন, যাচ্ছেন শুনা গেলেও নানা জটিলতায় এখনও তারিখ নির্ধারণ হয়নি।
বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী
