বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খন্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভান্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে। ১ মার্চ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীনতার নেপথ্যে গণ মাধ্যমের ভূমিকা।
আজ(০৬ এপ্রিল২০২২) প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৫
পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমেদ এই বলে সমানুভূতিশীল বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চরম মার খেয়ে পাকিস্তানের অপরিণামদর্শী জঙ্গী কর্মকর্তারা আজকাল জাতিসংঘের ভিতরে ও বাইরে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে বাংলাদেশে তাদের কৃতকর্মের কালিমা মোচনের ব্যর্থ চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। কাজেই বাংলাদেশ সমস্যাটি হচ্ছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিরোধ। এ বিরোধ যত শীঘ্র মিটমাট হবে ততই সাড়ে সাত কোটি মানুষের কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষের মনে ফিরে আসবে শান্তি ও আস্থার মনোভাব।
বিশ্বের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, বেতার ও টেলিভিশন সংস্থাও সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর জীবনের নিরাপত্তার জন্যে বাংলাদেশ সমস্যার আশু সমাধানের উপর জোর দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, বাংলাদেশের প্রকৃত গণপ্রতিনিধিরাই দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং লাখ লাখ শরণার্থীকে নির্বিঘ্নে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবার নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারবে।
১৫ আগস্ট, ১৯৭১
….. গত ২৫শে মার্চ থেকে ইয়াহিয়ার বর্বর সামরিক চক্র বাংলাদেশে যা করেছে সমগ্র বিশ্ব তাতেই হতবাক হয়েছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উথান্ট বর্ণিত মানব ইতিহাসের সেই সর্বাধিক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনার পর এবং মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী বর্ণিত মানব ইতিহাসের বৃহত্তম বিপর্যয় সৃষ্টির পর ইয়াহিয়ার বর্বর সেনাবাহিনী বর্তমান বাংলার নয়নমণি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মিথ্যে অভিযোগ এনে সামরিক আদালতে বিচার প্রহসন শুরু করেছে। এই বিচার প্রহসনের পিছনে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক চক্রের যে ঘৃণ্য উদ্দেশ্য ও দুরভীসন্ধি রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। বাংলাদেশে পাক সামরিক চক্রের বর্বরতা ও বীভৎসতার দৃষ্টান্তে এটাই মনে হয় যে, ইয়াহিয়া ও তার নয়া নাৎসী বাহিনী করতে পারে না এহেন কিছু নেই।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মি: ট্রুডো পাকিস্তানের জঙ্গী প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে এক তারবার্তায় শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এর পরিণতি অত্যন্ত গুরুতর হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও অন্যান্য দেশের পত্র-পত্রিকা, বেতার টেলিভিশনেও পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারে দারুণ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
লণ্ডনের প্রভাবশালী সংবাদপত্রগুলিতে মন্তব্য করা হয়েছে যে, যেভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসন শুরু হয়েছে তাতে পাক সামরিক চক্রের ওপর আদৌ ভরসা করা যায় না। লণ্ডনের ‘টাইমস্’ ‘ইয়র্কশায়ার পোস্ট’ ও অন্যান্য সংবাদপত্রে এই তথাকথিত বিচারের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। বৃটেনের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীগন এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক আইনজীবীসংস্থাও শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসনের জন্যে ইয়াহিয়ার বর্বর সামরিক চক্রের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – ৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৭২) চলবে।
আরও পড়ুন :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩০
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা