28 C
আবহাওয়া
৮:৫৭ অপরাহ্ণ - মে ১৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » ১৫ বছর পরে নির্বাচন? প্রশ্ন বিএনপি’র

১৫ বছর পরে নির্বাচন? প্রশ্ন বিএনপি’র


বিএনএ ডেস্ক : অন্তর্বতীকালীন সরকারের দ্বায়িত্ব গ্রহণের আগে গত বছরের ৮ আগষ্ট প্যারিস থেকে ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস শান্তির এক নতুন বাংলাদেশ গঠনের কথা বলেছিলেন। জনগণকে তার ওপর বিশ্বাস রাখতে বলেছিলেন। অনেকটা অভিমানের সূরে বলেছিলেন, জনগণকে স্বস্তি দিতে না পারলে তিনি প্রস্থান করবেন।

YouTube player

গত ৭ মাস ধরে তিনি দেশের চালকের আসনে রয়েছেন। তবে গত ৭ মাসে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। যৌথ বাহিনীর ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের মধ্যেও ছিনতাই, ডাকাতি, মব জাস্টিস চলছে। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা দাবি করেছেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি, বরং বেশ উন্নতি হয়েছে। তার নিরপেক্ষতা নিয়ে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন জনমনে সন্দেহ হলে তারেকের মনে সন্দেহ হয়েছে কীনা সেটা দেখতে হবে!

দেশের আইন শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ শাসনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। তার সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ করে চলে যাওয়া উচিত। সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামালের সঙ্গে অন্যমঞ্চ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।

বিবিসি বাংলার সঙ্গে স্বাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেছেন বিশ্বের সব দেশ তাকে সমর্থন ও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে জনগণের বিপুল আস্থা তার সরকারের ওপর আছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত পোষন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের কতটা আস্থা আছে, সময়ে টের পাবেন। এই মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশকে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছে। তিনি উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নাম উল্লেখ না করে তার কর্মকান্ডের সমালোচনা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের সময় বলেছেন, ছাত্ররাই তাকে অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। ৭ মাসের মাথায় সেই ছাত্ররা জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছে। এই দল গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেস্টার সমর্থন রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে গিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের পডকাস্টে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সেখানে তিনি ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেছেন বলে জানান। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ হয়। নতুন এই দলটি গণ পরিষদ নির্বাচন ও সেকেন্ড রিপাবলিক বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে। এই নিয়ে সারাদেশে হৈচৈ পড়ে গেছে। এর তিন দিন পর ৪ঠা মার্চ রায়ের বাজারে জুলাই ২৪  শহীদদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে গণ মাধ্যমের  সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চল মূখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম।

তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোন নির্বাচন হবে না।  খুনি হাসিনা এবং তাদের দোসরদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মানুষ, কোনো রাজনৈতিক দল যেন অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে কথা না বলে।

সারজিস আলমের এমন বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির আগুনে ‘ঘি’ ঢালার মতো ঘটনা। তার এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। সরজিস আলমের এই বক্তব্যের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। তিনি সারজিস আলমের উদ্দেশ্যে বলেন, পঞ্চগড়ে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে একজন পিয়নকে মনোনয়ন দিলেও তার জামানত থাকবে না।

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুর রহমান নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে জামায়াত ইসলামীর তরুন এক্সটেশন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে দিয়ে রাজনীতির নানা কলকাঠি নাড়াচ্ছে জামায়াত ইসলামী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, যারা গণপরিষদ নির্বাচন চায়, সংবিধান বাতিল করতে চায়, সেকেন্ড রিপাবিলক চায় তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি।

অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন না দিয়ে দেশের সর্বনাশ করছেন বলে দাবি করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফললুর রহমান। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছে। দেশকে নতুন করে মুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান একাত্তরের সম্মুখ রণাঙ্গন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের সঙ্গে গত ৭ মাসে নানা বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও অনেক বিষয়েই ঐকমত্য দেখা গেছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ মূলধারার ইসলামপন্থী দলগুলোর। তবে সংবিধানের আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘গণপরিষদ’ গঠন ও ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি যে রাজনৈতিক লক্ষ্য প্রকাশ করেছে, তাতে সবাই একমত নয়।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক বাস্তবায়নের কথা বলেছে, কিন্তু এগুলো কীভাবে হবে তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে এখনকার পরিস্থিতিতে এসব বিষয় নতুন করে বিতর্ক তৈরি করবে, নির্বাচনকে বিলম্বিত করবে এবং দেশকে কিছুটা অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যেতে পারে।’ জামায়াতের এই নেতা মনে করেন, এমন পরিস্থিতির উদ্ভব এড়াতে জরুরি কিছু সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান—সমাধানের উত্তম পন্থা হতে পারে।

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ