বিএনএ, ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এক বছরে ১০ টি ছোট, বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপন গ্যাস সিলেন্ডার গুলো বেশির ভাগ মেয়াদ নেই। ওই সব সিলেন্ডার দিয়ে আগুন নিভানোর কার্যকরিতা হচ্ছে না। ফোরসু শুধু সাজানো ভাবে দেখা যায়।
অন্যদিকে হাসপাতালের ভিতর ও বাইরে দিকে সব কিছু যেন অগোছানো অবস্থা পড়ে রয়েছে। এসি গুলো এলোমেলো ভাবে লাগানো তার মধ্যে আবার বছরের পর বছর যাচ্ছে কিন্তু সেগুলোর সার্ভিসিংয়ের কোন খবর নেই। এই ভাবে দীর্ঘদিন যাবত এসি চলতে থালে টেম্পারেসার নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘক্ষণ চললে অতিরিক্ত গরমে এসি বিস্ফোরণ ঘটে। এই ভাবেই চলছে হাসপাতলের এসি গুলো। তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণত রোগীদের।
গত বছর করোনার সময় নতুন ভবনের করোনার আইসিইউতে আগুনসহ ১০টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সার্বক্ষনিক আতংকের মধ্যে দিন পার করেন। গতকাল রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালের নতুন ভবনে এসি বিস্ফোরণে আগুন লাগার ঘটনায় জসিম উদ্দিন নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। আবার অনেকেই কম বেশি আহত হন।
অভিযোগে জানা গেছে, ওই ভবনের কিডনি রোগ বিভাগের ডায়ালাইসিস ইউনিটে ঢুকতেই হাতের ডানদিকে জানালায় থাকা এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনটি রুমে একযোগে ৩৪ জন রোগীর ডায়ালাসিস চলছিল।আগুনের কারণে তাদের ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সেখানে থাকা স্বজনরা অভিযোগ করেছেন অগ্নিকাণ্ডের সময় রোগীদের ফেলে সব নার্স, ডাক্তার ও কর্মচারিরা তাদের জীবন বাচানোর জন্য দ্রুত বেরিয়ে গিয়েছিলেন।রবিবার বিকেল তিনটার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রচণ্ড ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারতলা। অনেক রোগীর স্বজনরা রোগী নিয়ে ছোটছুটি করতে থাকেন। ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীরা চিৎকার ও কান্নাকাটি করতে থাকেন।অগ্নিকাণ্ডের সময় ডায়ালাইসিস ইউনিটের ঢুকতে দুই পাশে দুটি রুমে ১৪ জন ও একটি বড় রুমে ২০ জনের একসঙ্গে ডায়ালাইসিস চলছিল।
সেখানে দায়িত্বরত নার্সদের প্রধান ইয়াসমিন খানম জানান, হঠাৎ দেখি আমাদের প্রবেশ মুখে প্রচণ্ড ধোঁয়া। পরে বুঝতে পারলাম আগুন। ধোঁয়ায় পুরো ইউনিটি আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ডায়লাইসিরের রোগীরাও কান্নাকাটি করতে থাকেন। কারণ তাদের ডায়ালাইসিস চলছিল। তারা সেটা বন্ধ করেও বের হতে পারবে না। এরই মধ্যে হাসপাতালের লোকজন অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সে সময় চারিদিকে হাউমাউ চিৎকার ও কান্নার রোল পড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, সকালের শিফটের পর দ্বিতীয় শিফটের ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। একটা রোগীর ডায়ালাইসিসে ৪ ঘণ্টা করে সময় লাগে। আগুনের সময় আনুমানিক কোনো কোনো রোগীর দেড় ঘণ্টা, আবার কোনো রোগীর দুই ঘণ্টা ডায়ালাইসিস সম্পন্ন হয়েছিল। তবে তিনি দাবি করেন, ঘটনার সময় নার্স-ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। কেউ রোগীদের ফেলে বের হয়ে যায়নি।
এদিকে ঘটনার সময় ডায়ালইসিসে থাকা আরিফ হোসেনের (৪০) স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, আগুনের পরপরই পুরো ইউনিট ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। এটি দেখেই নার্সরা বাইরে চলে যান। রোগীদের বের করার মতো কেউ ছিল না। কিছুক্ষণ পর একেএকে সবাই আবার ফিরে আসেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে আসা ডায়লাইসিসের রোগী আবুল হোসেনের (৫৫) ছেলে জিহাদ হোসেনও একই কথা জানান। তিনি বলেন, ধোঁয়া ওয়ার্ডসহ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা প্রথমে ছোটাছুটি করে বাইরে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তারা আবার ফিরে আসেন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই হাসপাতালে থাকা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে আমাদের লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। প্রচণ্ড ধোঁয়া ছিল, তা উপেক্ষা করে মুখে কাপড় বেঁধে আগুন নিভিয়ে ফেলেন তারা। সঙ্গে আনসার সদস্যরা ও নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টারসহ আরও অনেকে ছিলেন।
তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সঙ্গে অন্যান্য কর্মকর্তারাও ছিলেন। ফায়ার সার্ভিস এসে পৌঁছানোর আগেই আমাদের লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীদের সঙ্গে আমরা সেখানে অবস্থান করি। ডাক্তার-নার্সরাও ছিলেন। তখনো প্রচণ্ড ধোঁয়া ছিল। নির্দেশ দেওয়া হয়, যতটা সম্ভব ডায়ালাইসিস যাদের শেষ করা যায়, তাদের দ্রুত শেষ করা হোক। মোটামুটি সবারই চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে। এরপরই রোগীদের সেখান থেকে বের করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ কর থাকেন। তবে কোন টা সঠিক আর কোনটা সঠিক না তা আমরা দেখে ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে বিছানা চেয়ে দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। আবার তার সঙ্গে রোগী স্বজনরাও আসে তখন হাসপাতালের অবস্থা কি হতে পারে। রোগী লোকজন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকে না। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখে। এমনকি সিগারেট খেয়ে আগুন সহ অধৈক আবার ময়লা আবর্জনাতে ফেলেদে। এই সব কারনে অনেক সময় এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বলছেন, কম্প্রেসারের নিচে পুরাতন কাপড় ছিল বলে জানান। প্রতিদিন আমাদের লোকজন ময়লা পরিষ্কার করে এবং বাইরে থেকেও টাকা খরচ করে লোক এনেও পরিষ্কার করানো হয়। আগুন নেভানোর পর সেই স্থান পরিষ্কার করা হচ্ছে। দ্রুত সেখানে রোগীদের চিকিৎসা আবার শুরু করা হয়েছে।
বিএনএ/আজিজুল,এমএফ