বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ব্যাপক সহিংসতার আশংকার মধ্য দিয়ে ১৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সোমবার ( ৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আশ্বাসের পরও আশ্বস্ত হতে পারছেন না প্রার্থীরা। প্রচারণার প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকটি সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিকেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। প্রাণও হারিয়েছেন একজন। পুরো সাতকানিয়াকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিবাদ উত্তপ্ত করে তুলেছে।
১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব ইউনিয়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১ হাজার ৩৬৩ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ডিবি, এসবি, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্যরা কাজ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া ৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। ভোটকেন্দ্রে সংঘাত এড়াতে প্রতিটি কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে ৬ সদস্যের পুলিশ টিম। এছাড়াও ৫ প্লাটুন বিজিবির পাশাপাশি র্যাবের ৬টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করবে।
সাতকানিয়া থানার ওসি আবদুল জলিল জানান, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাবি- উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থীদের দাবি, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিরোধীরা একজোট হয়ে তাদের টার্গেট করে হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। নির্বাচন সংক্রান্ত এ পর্যন্ত থানায় ১১টি মামলা ও অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
নির্বাচনি সহিংসতা এড়াতে আমাদের ফোর্স বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক আমাদের পুলিশের টিম বিভিন্ন ইউনিয়নে কাজ করছে। এ পর্যন্ত নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনায় থানায় ৫টি মামলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে ৬টি। সবগুলোই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজন গ্রেফতার করে আদালতেও পাঠিয়েছি বলে জানান ওসি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা ইতোমধ্যে প্রার্থীদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করেছি। সেখানে তাদের কঠোরভাবে সাবধান করেছি। এছাড়া সর্বোচ্চ ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও কেউ চলাফেরা করতে পারবেন না। প্রচারণার শুরু থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনি আচরণ বিধি ভঙ্গ করায় প্রার্থীদের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, সাতকানিয়ায় সপ্তম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৮ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৪২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫৮০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মাদার্শা, সাতকানিয়া, পুরানগড় ও কেঁওচিয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে চরতী, খাগরিয়া, ছদাহা, নলুয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইশ, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, বাজালিয়া ও সোনাকানিয়ায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নির্বাচনে ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রের ৬৭১ বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৩ জন ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৮ জন।