বিএনএ, ঢাকা: তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দরে আরোপিত ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা নির্বাচনের পর তুলে নেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সঙ্গে বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে। উভয় সংগঠন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
বৈঠকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। ডিবিএর পক্ষে সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং বিএমবিএর পক্ষে নেতৃত্ব দেন আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সিইও মাজেদা খাতুন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ডিবিএ’র সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পর শেয়ার দরের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে কমিশন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের পর যাতে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্য সব ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা ও পরামর্শ চেয়েছে বিএসইসি।
বৈঠক সূত্র জানায়, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হলে যদি আতঙ্কে শেয়ার বিক্রির চাপ আসে, তা মোকাবিলার জন্য বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল রাখার সুপারিশ এসেছে। এর মধ্যে শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল (সিএমএসএফ) থেকে ১০০ কোটি টাকার ঋণ তহবিল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান। সিএমএফএস থেকে চাইলে ব্রোকার বা মার্চেন্ট ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবে। তবে ঋণের সমপরিমাণ অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগের শর্ত থাকবে। সব পক্ষ একত্রে এক লক্ষ্যে কাজ করলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হলেও কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ চাইলে তারা একবারে সব শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস না তুলে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের পরামর্শ দেন। শেয়ারের ক্যাটেগরি অনুযায়ী (এবাবি) বা মার্জিন অযোগ্য শেয়ারগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরামর্শ এসেছে।
নির্বাচনের পর কখন ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে বৈঠক জানিয়েছে, দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি বিএসইসি। জানুয়ারিও হতে পারে, আবার ফেব্রুয়ারিও হতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। তবে আলোচনা যেহেতু শুরু হয়েছে, তা কার্যকর হবে।
দেরিতে হলেও বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ডিবিএ। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, দরপতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস কখনও শেয়ারবাজারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে না। বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগ বিনিয়োগ এ কারণে দেড় বছরের বেশি সময় আটকে আছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।
দরপতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এর পর ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ১৬৮ শেয়ার থেকে তা প্রত্যাহার করা হলেও শেয়ারগুলোর ক্রমাগত দরপতন দেখে ২০২৩ সালের ১ মার্চ পুনরায় সব শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। এর আগে করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ প্রথম সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি।
গত বৃহস্পতিবার বৈঠক শুরুর আগে দুপুর আড়াইটায় বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধি দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। লেনদেনের শুরুটা দরপতনে হলেও দুপুর ১২টা থেকে পরিবর্তন হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ডিএসইতে ১০৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে, কমেছে ৩৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৭৭টির দর। ক্রেতার অভাবে ৭৪ কোম্পানির একটি শেয়ারও কেনাবেচা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, স্কয়ার ফার্মা এবং স্টাইল ক্রাফট। স্কয়ার ফার্মার শেয়ার ৪০ পয়সা বেড়ে সর্বশেষ কেনাবেচা হয় ২১০ টাকা ২০ পয়সা দরে। বাকি দুটির দর ১০ পয়সা করে বেড়েছে। এআইবিএল প্রথম এবং এসইএমএল আইবিবিএল নামে দুই ফান্ডও ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছে।
বেশির ভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএসইএক্স সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬২৪৪ পয়েন্টে উঠেছে। এ ছাড়া লেনদেন ৫৬ কোটি টাকা বেড়ে ৩৪৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বিএনএনিউজ/ বিএম