বিএনএ, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ সদরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বন্ধু জহিরুল ইসলামের (২৫) মায়ের ৩৯ শতক ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করে দিয়েছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের একদল তরুণ। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তারা।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দিনভর উপজেলার পুটিয়ালিচর গ্রামে জোছনা বেগমের উঠানে ওই কাটা ধান মাড়াই করেন স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা। এর আগে গতকাল রবিবার দিনভর ধান কাটেন তারা।
ধান কাটা তরুণরা “দাপুনিয়া-ঘাগড়া হেল্পলাইন” নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তারা সবাই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে রয়েছে রাকিব, উবায়দুল, সিফাত, আরিফুল, চমক, ফরাজী, ফরহাদ’সহ ১০ জন।
দাপুনিয়া-ঘাগড়া হেল্পলাইনের পরিচালক মো. রাকিব হাসান বলেন, গত ১ আগস্ট মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান জহিরুল। জহিরুল ইসলাম সদর উপজেলার পুটিয়ালিচর গ্রামের আমীর আলী ও জোছনা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিল। তাদের একমাত্র মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। সেই সাথে স্বামী আমীর আলী অসুস্থ হয়ে থাকেন নেত্রকোনায়।
এমতাবস্থায় সংসারের ছেলেকে হারিয়ে একা হয়ে যায় মা জোছনা বেগম। কিন্তু ছেলে হারানোর শোকে কাতর দিহেশারা এই মাকে মনে রেখে ছেলের বন্ধুরা। তারা প্রায়ই জহিরুলের মাকে দেখতে যায়। খোজঁখবর নেয় সংসারের।
এরই মধ্যে চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে জহিরুলের বন্ধুরা জানতে পারে প্রতিবেশি এক ব্যক্তির কাছ থেকে রেহান (ভাগে নেওয়া) নেওয়া ৩৯ শতক জমিতে জোছনা বেগম টাকা ও শ্রমিকের অভাবে ধান রোপন করতে পারছে না। এই খবরে নিহত জহিরুলের ১০ বন্ধু পরিকল্পনা করে নিজেরা কাজ করে ওই জমিতে ধান রোপন করে দেয়।
ওই জমির ধান মাড়াইয়ের সময় হওয়ায় গতকাল ৪ ডিসেম্বর দিনভর ওই জমির ধান কেটেছে এই স্বেচ্ছাসেবী তরুনরা। এরপর আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই কাটা ধান জোছনা বেগমের বাড়ীতে এনে মাড়াইয়ের কাজ করছেন তারা।
রাকিব আরও জানান, জহিরুল অনেক ভালো ছেলে ছিল। দাপুনিয়া-ঘাগড়া হেল্পলাইনের কোষাধক্ষ ছিল জহিরুল। সে সব সময়ই বন্ধুদের সাথে নিয়ে এলাকার মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত রাখত। তাঁর উদ্যোগেই গ্রামের খালে প্রায় ৪০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সে রক্ত দিতো। গেল বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে ত্রাণও নিয়ে যায় জহিরুল।
রাকিব বলেন, বন্ধুর মায়ের জন্য আমরা কিছু করতে পেরেছি, এতেই অনেক ভালো লাগছে। আমরা চাই সমাজের প্রতিটি তরুণ মানবিক ভাবে জাগ্রত থাকুক। তারাও জহিরুলের মত সমাজের কল্যানে অবদান রাখুক।
জোছনা বেগম বলেন, আমার ছেলে চলে যাবার পর থেকেই আমার জীবনে কোনো সুখ, আহ্লাদ নেই। বাড়িতে মেয়েও থাকে না। ছেলের বন্ধুরা আমার বাড়ি এলে খুব ভালো লাগে। সময়ে অসময়ে তারা এসে আমার ভাল মন্দ জানতে চায়। এবার ধান রোপন করে কেটেও দিয়েছে। আল্লাহ এদের ভাল রাখুক।
বিএনএনিউজ/হামিমুর রহমান/এইচ.এম।