35 C
আবহাওয়া
১:২৭ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সেই অদম্য “শোভা” বুয়েটে শোভা পাচ্ছে

সেই অদম্য “শোভা” বুয়েটে শোভা পাচ্ছে

সেই অদম্য "শোভা'' বুয়েটে শোভা পাচ্ছে

বিএনএ ডেস্ক : শোভা রানী । অদম্য এক তরুণী। জীবনযুদ্ধে জয়ী এক প্রমীলা।  জীবনে বহু প্রতিকূলতা এসেছে। সৎবাবার অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তবু হাল ছাড়েননি শোভা রানী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মধ্যপাড়া এলাকার প্রতিমা রানী দাসের একমাত্র সন্তান শোভা রানী। জন্মের পাঁচ–ছয় মাস আগেই বাবা বুলু চন্দ্র লোদকে হারান। সেই থেকে স্বজনদের কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে মা-মেয়ে নানা জায়গায় ঘুরেছেন। শেষ পর্যন্ত মেয়ের চিন্তা করেই দ্বিতীয় বিয়ে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসেন প্রতিমা।কিন্তু তার ভাগ্য প্রসন্ন ছিলনা। দ্বিতীয় স্বামীর অত্যাচারে তার জীবন বিষবৎ ছিল।  এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই মা-মেয়ে হাল ছাড়েনি। শোভা জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসিতে জিপিএ-৫ পান।

একদিনের ঘটনা। শোভা রানীর তখন এসএসসি পরীক্ষা চলছে।পরের দিন পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষা। এদিকে আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই মায়ের সঙ্গে শোভার সৎবাবার ঝগড়া শুরু হয়েছে।  রাত যখন আনুমানিক ১২টা ।মাসহ শোভাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন সৎবাবা। প্রতিবেশীর ঘরে কোনোমতে রাত কাটিয়ে পরদিন পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি।সেই এসএসসি পরীক্ষাতেই শোভা পেয়েছেন ‘গোল্ডেন জিপিএ–৫’। পদার্থবিজ্ঞানের নম্বর ৯৮।  সেই অদম্য শোভা গত ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত বুয়েটের ফলাফলে মেধাতালিকায় ৭২২তম হয়ে পুরকৌশলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন এই শিক্ষার্থী।

মাত্র সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই শোভা রানীকে রোজগারের পথ খুঁজতে হয়েছিল। ফলে সেসময় টিউশনি শুরু করেন। মন দিয়ে পড়তেন, আর অন্যকে পড়াতে গিয়ে পড়াশোনার চর্চাটা আরও ভালো করে হতো। অন্যদিকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ঘর চলত, চলত স্কুলের বেতন। এরইমাঝে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ তার  পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

‘পড়াশোনায় সৎবাবার সমর্থন ছিল না। নবম শ্রেণিতে থাকাকালেই তিনি আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন’—জানান শোভা। তখন এগিয়ে আসেন স্থানীয় কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা। কখনো বিনা বেতনে, কখনো নামেমাত্র বেতনে পড়িয়েছেন তারা।

’শোভাকে পড়াশোনা করাতে দিনের পর দিন মুখ বুজে কাজ করেছেন তাঁর মা। আচারের এক হাজার প্যাকেট বানালে ৩০ টাকা, এক কেজি চকলেট বানালে ১ টাকা করে পেতেন। শোভাও মাকে সাহায্য করেছেন এই কাজে। ।

ভাড়া বাসার দুই রুমের একটিতে থাকতেন শোভা। কিন্তু সেই রুমের ভাড়া দিতেন না বলে বাড়ির মালিক ঘরের বাতি জ্বালাতে দিতেন না। পাশের ঘরের আলোয় বসে পড়তে হতো শোভাকে।

এইচএসসি পাসের পর  ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।  স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলে পড়বেন। কিন্তু কোচিংয়ে ভর্তি হবেন কীভাবে, এ নিয়ে রয়ে গেল অনিশ্চয়তা। একদিন এক বান্ধবীর কাছ থেকে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের ভর্তি কোচিং বৃত্তির কথা জানতে পারলেন শোভা রানী। কিন্তু এই বৃত্তি পাওয়ার জন্য একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। সেই পরীক্ষায় ভালো করলেই কেবল পাওয়া যাবে কোচিং ফি ও থাকা-খাওয়ার খরচ।

সেই পরীক্ষায়ও ভালো ফলাফল করেন শোভা। হোস্টেলে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির জন্য পড়াশোনা করার সুযোগ পেলেন।

পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম পূরণ ও যাতায়াতের খরচ বহন করে ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। এরপর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে শোভা দেখান দারুণ চমক। বুয়েটে ৭২২তম হওয়ার পাশাপাশি ঢাবি ক ইউনিটে ১০৯তম, জাবি এ এবং এইচ—দুই ইউনিটেই ১৯তম, রাবিতে সি ইউনিটে ৩য়, বুটেক্সে ৩৬৫তম এবং গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৮৮৬তম হয়েছেন শোভা।

এত এত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও মায়ের প্রেরণাই ছিল শোভার একমাত্র সম্বল। শোভার মতে, ‘যখনই কোনো বাধা এসেছে, আমি চেষ্টা করেছি মায়ের মুখটা মনে করার। আমি ভালো কিছু করলে মায়ের হাসিমুখটাই আমাকে প্রেরণা দিয়েছে পরবর্তীতে আরো ভালো কিছু করার।’

শোভা বলেন, ‘পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম হয়েছে অনেকবার। কাল স্কুলে যেতে পারব কিনা তার নিশ্চয়তা নেই, এমনও দিন গেছে। কিন্তু মায়ের কথা ভেবেই পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।’

বিএনএ/ ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ