28 C
আবহাওয়া
১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: দেশ অচল,বন্দর অচল

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: দেশ অচল,বন্দর অচল

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: দেশ অচল,বন্দর অচল

বিএনএ ডেস্ক : জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা। দেশের বন্দরগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে।  শুক্রবার(৫ নভেম্বর) সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে পণ্য ও যাত্রীবাহী যান। আর আগামী রোববার (৭ নভেম্বর) পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে বলে জানিছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

এর আগে বুধবার (৩ নভেম্বর) জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ঐদিন রাত ১২টা থেকেই বর্ধিত এই দাম কার্যকর হয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে  বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভিন্ন জেলার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) থেকে বাস ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ।

তেলের দাম কোনো আলোচনা ছাড়াই একতরফা বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ অনেক বাড়বে দাবি করে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয় ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি।

চট্টগ্রাম থেকে বাস-ট্রাক-লরি চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে অটোরিকশা চলাচল করছে।

বরিশালের রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে আজ ভোর থেকে বাস চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে না এবং অলস বসে আছে পণ্য পরিবহনের ট্রাক লরিও।খুলনা থেকে যে ২২টি রুটে বাস চলাচল করে সেগুলোতেও আজ ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ আছে। বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলাগুলোতেও স্থবির অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।

জেলায় কোনো ধরনের ট্রাক চলাচল না করায় পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা জেলায় ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছি। আমাদের দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি খো. ইকবাল হোসেন বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমরা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। এমন সময় সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের বিস্মিত করেছে। তাই আমরা জেলায় সর্বত্র বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ির মালিকরা শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। পরিবহন শ্রমিকরা তাতে সহায়তা করছেন। জ্বালানি তেলের  দাম কমাতে হবে অথবা পরিবহন ভাড়া সমন্বয় করতে হবে। তা না করা পর্যন্ত গাড়ি চালানো বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে  চট্টগ্রামেও অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরণের গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহন বন্ধ রয়েছে। ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেছেন, ‘হুট করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এভাবে মালিক-শ্রমিকদের পক্ষে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর। এর প্রভাব পড়বে ভাড়ায়। কিন্তু ভাড়া বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

শুক্রবার ভোর থেকে মোংলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, মোংলা-খুলনা, মোংলা-বাগেরহাট-বরিশালসহ সব রুটে বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে মালিক-শ্রমিকেরা।

এদিকে সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ প্রাইভেটকার, টেম্পু, সিএনজি অটোরিকশায় যাতায়াত করছেন। যাতায়াতে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
প্রাইভেটকার, টেম্পু

নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসি, নিউ মার্কেট, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তাঘাটে গণ পরিবহন নেই। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন দীর্ঘ সময় ধরে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুছা বলেন, গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন ভাড়া বাড়বে। যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ুক-এটা আমরা চাই না।

মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন জানান, গাড়ি চালানোর পরিবেশ নেই। যার যার গাড়ি বন্ধ রাখবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে বন্দরে আমদানি করা পণ্যচালান ডেলিভারিতে। তবে জেটিতে জাহাজ থেকে খোলাপণ্য ও কনটেইনার লোড-আনলোড স্বাভাবিক রয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরুর পর বন্দরের জেটি, ইয়ার্ড ও অফডকে (ডিপো) স্বাভাবিক ডেলিভারিতে ছন্দপতন ঘটে।

বন্দরের এনসিটি, সিসিটি’র অপারেশনের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা জানান, জেটি, ইয়ার্ড ও টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ কর্মযজ্ঞ স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। জেটির জাহাজগুলোর লোড-আনলোড স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমদানি পণ্য ডেলিভারি ৫ শতাংশে ঠেকেছে। অনেক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি পণ্য বা কনটেইনার বোঝাই করে অপেক্ষা করেছে ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেই বন্দর ছাড়ার আশায়।
বন্দর অচল

বন্দরের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সকাল আটটায় বন্দরের মেইন জেটিতে ৬টি কনটেইনার জাহাজ, ৩টি সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ, ১টি খাদ্যশস্যাবাহী ও ২টি সিমেন্ট ক্লিংকারবাহী জাহাজ ছিল। এ সময় বহির্নোঙরে ৬৫টি জাহাজের মধ্যে আনলোড হয়েছে খাদ্যশস্যবাহী ৯টি, সাধারণ পণ্যের ৮টি, সারের ২টি, ক্লিংকারের ২০টি, চিনির ২টি ও তেলের ৩টি জাহাজে। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের মধ্যে কনটেইনারবাহী ছিল ৩টি। ওই দিন ২০ ফুট দীর্ঘ (টিইইউ’স) ৪৯ হাজার ১৮টি কনটেইনরা ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৭ হাজার ৭৩৮টি। ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছিল ৪ হাজার ৩৪টি।
বন্দর ট্রাক মালিক সমিতি

বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুর আহমদ বলেন, প্রতিদিন ৫-৬ হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ঢুকে বন্দরে। জাহাজ বেশি ভিড়লে আরও বেশি পণ্যবাহী গাড়ির প্রয়োজন হয়। ধর্মঘটের কারণে ট্রাকগুলো অলস বসে আছে।

বিএনএ/ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ