34 C
আবহাওয়া
১০:৫৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিএনপির বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলায় ৩৬ লাখ আসামি

বিএনপির বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলায় ৩৬ লাখ আসামি

বিএনপির বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলায় ৩৬ লাখ আসামি

।। সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ।।

আদালত প্রতিবেদক: নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো বহু অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় দিশেহারা সরকারবিরোধীরা। সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো আন্দোলন চালিয়ে গেলেও নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে আদালতে। বিএনপির হিসাবে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছে, তার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ এবং এসব মামলার আসামি ৩৬ লাখের বেশি। এসব মামলায় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে শতাধিক আসামি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে অভিযোগ করে আসছেন, নির্বাচনী বছরে হঠাৎ করে দলটির নেতাকর্মীদের নামে মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা, দণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা বেড়ে গেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাই কোনো না কোনো মামলার আসামি। এরমধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত। অন্যদিকে এক মামলায় জামায়াত আমির ও সেক্রেটারিরও বিচার শুরু হয়েছে। অন্যদিকে একটি মামলায় জামায়াতের বর্তমান আমির ও সেক্রেটারিরও বিচার শুরু হয়েছে।

বিএনপি এসব মামলাকে আন্দোলন দমাতে সরকারের কৌশল হিসেবে বলে দাবি করছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্টদের দাবি সহিংসতা কিংবা ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অপরাধে এসব মামলা হয়েছে।

সম্প্রতি ছয়টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪৪ জন নেতাকর্মীর কারাদণ্ড হয়েছে। জানা গেছে, আরও দুই শতাধিক মামলার শুনানি চলছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০টির বিচার শেষ পর্যায়ে। ১৭০টি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এসব মামলায় কেন্দ্র থেকে শুরু করে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা রয়েছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুই মামলায় সাজা দেন ঢাকার বিশেষ আদালত। আরও তিনটি মামলার বিচার চলছে। ৭ বছর আগে মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের প্রথম সাজা হয়। এরপর আরও চারটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। বিদেশে থাকা অবস্থায় সবশেষ গত ২ আগস্ট দুর্নীতির মামলায় তার ৯ বছরের কারাদণ্ড হয়। একই মামলায় তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানকেও তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মাত্র ১৬ কার্যদিবসে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়।

আরও পড়ুন: বিএনপির পথসভায় বাধা বৃষ্টি

ঢাকার বিভিন্ন আদালতে গত আট মাসে ছয়টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। তারা মূলত ঢাকা মহাগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী। এর মধ্যে আট বছর আগে গুলশান এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার মামলায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর যুবদলের (উত্তর) আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিনসহ (জুয়েল) তিন বিএনপি নেতাকে কারাদণ্ড দেন আদালত। ১০ বছর আগে সবুজবাগে ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতার মামলায় গত ১৯ জুন বিএনপি নেতা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুর রহমানসহ সাতজনের দুই বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। আর ১০ বছর আগে মুগদা এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় গত ৩ এপ্রিল বিএনপির আরও সাত নেতাকর্মীর কারাদণ্ড দেন আদালত।

গত ৭ আগস্ট যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ২১ জনের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। ২০১৩ সালে কোতোয়ালি থানা সংলগ্ন এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগের মামলা ছিল এটি। গত ১৭ আগস্ট সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান, আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাসাস সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহসহ পাঁচজনের কারাদণ্ড দেন ঢাকার সিএমএম আদালত। সবশেষ গত ১৮ আগস্ট রমনা থানার একটি মামলায় আবুল কালাম আজাদ নামে একজন বিএনপি কর্মীকে সাজা দেন আদালত। গত ৭ সেপ্টেম্বর তিন শতাধিক মামলার আসামি ঢাকা মহানগর যুবদলের (উত্তর) সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরকে হাজিরা শেষে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এছাড়া, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান এরই মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত। ইকবাল হাসান মাহমুদের বিরুদ্ধ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় সম্প্রতি।

আরও পড়ুন: তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩০ সেমি ওপরে

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কোন লেভেলে হচ্ছে বা হচ্ছে কি না বলা যাচ্ছে না। আমরা রাজপথে আছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে এক পাক্ষিক নির্বাচন করার জন্য অর্থাৎ বিএনপিকে ছাড়া আগের মতো নির্বাচন করতে চায়। সে কারণে তারা নতুন আরেকটা ছল-চাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে।

দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের আগে মামলা সচল হচ্ছে এটা মোটেও ঠিক নয়। কারণ সুপ্রিম কোর্টসহ আদালতের বিষয়ে আপনারা সাংবাদিকরাও জানেন, কজলিস্ট (কার্যতালিকা) আছে। কজলিস্টে (কার্যতালিকা) মামলাগুলো শুনানির জন্য ওঠে। তিনি বলেন, ইকবাল মাহমুদ টুকু, আমানউল্লাহ আমান, ডিআইজি প্রিজন, এমন সব মামলা বহুদিন ধরে কজলিস্টে আসছে। ওনারা নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছিল না। আমরা দুদক একটু একটু শুনানি করেছি। আমানউল্লাহর মামলায় আমাদের বিষয়ে বছরখানেক শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই এটা নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সরিয়ে রাখার জন্য দুদককে সরকার ব্যবহার করছে এটা মোটেও ঠিক কথা নয়। ২০১৪ সালের মামলা, তার আগের মামলায় আজ ২০২৩ সালে চলে এসেছে। ১০ থেকে ১২ বছর চেষ্টা করে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন ইনসিডেন্টলি সেটার সময় যদি নির্বাচন চলে আসে আমাদের তো করার কিছু নেই।

বিএনএনিউজ/বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ