28 C
আবহাওয়া
৭:১০ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মামলা বানিজ্য: ‘নিষ্পত্তি’ মামলা ফের দায়ের, ‘মৃত’ ব্যক্তিও আসামি

মামলা বানিজ্য: ‘নিষ্পত্তি’ মামলা ফের দায়ের, ‘মৃত’ ব্যক্তিও আসামি


বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গত ৫ আগষ্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়।  সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যায়। এর এক সপ্তাহ পর থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণহারে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রবনতা এতটাই বেশি যে নিহত ব্যক্তির বিচার নিস্পত্তির তথ্য গোপন করে এখন  নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। বগুড়া সদর থানায় এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া জামালপুর সদর থানায় দায়ের করা মামলায় আসামী করা হয়েছে ক্যান্সারে মারা যাওয়া সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকেও।

YouTube player

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আবদুল বাকী হত্যার শিকার হন। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। নিহত আবদুল বাকীর বাবা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে এই মামলা করেন।

২০১৯ সালের ২২ আগস্ট আদালত তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সব আসামিকে খালাস দেন। ওই রায়ের পাঁচ বছর পর আবদুল বাকী হত্যার ঘটনায় গত বুধবার বগুড়া সদর থানায় নতুন করে আবারও একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এই মামলার বাদীও আবদুল বাকীর বাবা ইয়াকুব আলী। নিহত আবদুল বাকীর বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি গ্রামে। তিনি ইসলামি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  সাইহান ওলিউল্লাহ  জানান, ২০১৪ সালে শিক্ষক আবদুল বাকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৬৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।  নতুন মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেনজীর আহম্মেদকে। তিনি আগের মামলায়ও আসামি ছিলেন। তাঁকে ইতিমধ্যে এই হত্যার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। এ রকম আরও কয়েকজন খালাস পাওয়া আসামিকে একই অভিযোগে নতুন মামলার আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয় আব্দুল বাকীর লাশ দাফনের পর বাদী বগুড়া সদর থানায় মামলা দিতে গেলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে পুলিশ মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর গ্রহণ করে থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মামলা না করার জন্য হুমকি দেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থানায় মামলার সিদ্ধান্ত নেন।

বগুড়া আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক আবদুল বাকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়। আবদুল বাকীর বাবা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা করেন। মামলায় সাত থেকে আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

মামলার তদন্ত শেষে প্রথমে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন  আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁদের অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।

এ দিন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন আদেশ দেন, মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাদীর প্রতি নোটিশ জারি ও জারি অন্তে তা ফেরত আসার পরও বাদী নারাজি দেননি। দুই দফা তদন্তে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সত্য বলে গৃহীত  এবং  আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ রয়েছে।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বাসেত  বলেন, আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া কোনো হত্যা মামলার তথ্য গোপন করে নতুন করে তা থানায় দায়ের করার সুযোগ নেই। বাদীকে কোনো ধরনের চাপ বা ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনা ঘটলে তিনি নতুন করে আদালতে রিভিশন মামলা করতে পারতেন। তথ্য গোপন করে ১০ বছর পর দ্বিতীয় দফায় একই বাদী থানায় করা এ মামলা টিকবে না। তদন্তেই তা শেষ হয়ে যাবে

এদিকে গত ৩ সেপ্টেম্বর জামালপুর সদর থানায় দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে সফিকুল ইসলামকে, যিনি জামালপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছিলেন। পৌরসভার পালপাড়া এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য প্রয়াত নুরুল ইসলামের ছেলে সফিকুল। তার মৃত্যু সনদ যাচাই করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।

জামালপুর পৌরসভার ফুলবাড়িয়া দড়িপাড়ার হায়দার আলী নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। সাবেক পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানুসহ ৮৩ জনের নাম দিয়ে এবং ১৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার আসামি তালিকায় ৭৮ নম্বরে সফিকুলের নাম রয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৫ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে চলে গেলে ওই দিন বিকালে আসামিরা দেশীয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয়। মামলার বাদী ও তার দুই সহযোগীকে অভিযুক্তরা মারধর করে ৩৮ হাজার নগদ টাকা ও একটি স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে নিয়ে হত্যার হুমকি দেয় বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে।

জামালপুর সদর থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত জানান,  মৃত মানুষের নামে মামলা দেওয়া হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  সারাদেশে গণ মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে এক ধরনের ‘তুগলকি কান্ড’ চলমান রয়েছে। এছাড়া চলছে মামলা বানিজ্য। নিরীহ মানুষকে ফোন করে থানায় ডেকে নিয়ে  মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে গণ চাঁদাবাজির ঘটনা ওপেন সিক্রেট।

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ