32 C
আবহাওয়া
১:৩৩ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রোহিঙ্গা সহায়তায় আর্থিক সঙ্কটের আশঙ্কা জাতিসংঘের

রোহিঙ্গা সহায়তায় আর্থিক সঙ্কটের আশঙ্কা জাতিসংঘের

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

বিএনএ ডেস্ক: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে কাজ করার পাশাপাশি তাদের জন্য একটি বাস্তবসম্মত দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খোঁজার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গা সহায়তার আর্থিক সঙ্কটের আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয়ের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস উত্থাপন করেছেন।

প্রতিবেদনে ২০২২ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছর হিসেবে স্মরণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ইউক্রেন অঞ্চলে যুদ্ধের উপর্যুপরি প্রভাব এবং কোভিড-১৯ মহামারির ক্রমাগত আঘাতে উদ্ভূত জ্বালানি ও খাদ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের অগ্রগতিকে স্তিমিত করে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটি সতত বিরাজমান বাস্তবতা, যার প্রভাবে সংঘটিত হচ্ছে দুর্যোগময় বন্যা এবং মিয়ানমারে বিরোধ পঞ্চম বছরের মতো গড়ানোর মধ্য দিয়ে এ দেশটি প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া অব্যাহত রেখেছে।

২০২২ সালের চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ সত্ত্বেও জাতিসংঘ এই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, নীতিমালা জোরদার করার পাশাপাশি বেশ কতগুলো ধারাবাহিক উদ্যোগ ও সেবা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহায়তা দেয়া অব্যাহত রেখেছে। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি, শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতায় বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য সহায়তা, নিরাপদ, বৈধ ও নিয়মিত অভিবাসন, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রগুলো জোরদার করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার পাশাপাশি জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়গুলোতে সহায়তা দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ উন্নয়নচ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রয়াস পরিচালনায় সুষ্ঠুভাবে কাজ করেছে।

জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬ বাস্তবায়নের প্রথম বছরে এদেশে পরিচালিত জাতিসংঘের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসেছে লাখ লাখ মানুষ এবং হাজার হাজার মানুষ এসব উদ্যোগের ফলে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় জলবায়ু প্রভাবের কারণে সৃষ্ট দেশের বিভিন্ন সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে সরকারকে সহায়তা দেয়ার জন্যও কাজ করেছে।

২০২২ সালের মে মাসে এদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চল গুরুতর আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে, যার ফলশ্রুতিতে ৭.২ মিলিয়ন মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন। ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক ৭২২ মিলিয়ন ইউএস ডলারের অধিক। তাৎক্ষণিক জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি আকস্মিক বন্যায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ৷ এই লক্ষ্যে জাতিসংঘ কেন্দ্রীয় জরুরি সহায়তা তহবিল (সিইআরএফ) সর্বাধিক দুর্যোগ কবলিত জেলাগুলোতে ঝুঁকিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদানের জন্য ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ করা হয়৷ পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সার্বিকভাবে ২০.৪৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের তহবিল গঠন করে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পঞ্চম বছরের মতো বাংলাদেশ মিয়ানমার হতে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া অব্যাহত রেখেছে এবং ২০১৭ সালের আগস্ট মাস হতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য উদারভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থাকরার জন্য বাংলাদেশ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আর্থিকও পরিবেশগত উভয় ধরনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে; শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত, সম্মানজনক, নিরাপদ ও টেকসইপ্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী প্রয়াস আবশ্যক। বাংলাদেশ সরকারের সাথে মিলিতভাবে জাতিসংঘ ও আমাদের মানবিক সহায়তা অংশীদাররা বাংলাদেশে নিবন্ধিত আনুমানিক ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩০৯ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সহায়তার লক্ষ্যে কাজ করার পাশাপাশি তাদের জন্য একটি বাস্তবসম্মত দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খোঁজার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।

গোয়েন লুইস জানান, ২০২২ সালে, রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মানবিক সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে উক্ত বছরের শেষ নাগাদ যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা (জেআরপি) এর আওতায় ৮৮১মিলিয়ন ইউএস ডলারের একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক আবেদনের ৫৯ শতাংশ প্রার্থিত তহবিল (৫২০.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার) সংগৃহীত হয়। এই তহবিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও মৌলিকসেবাগুলো সফলভাবে দেয়া হয়। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের উদার অবদানের জন্য আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই, কারণ ২০২৩ সালে আমরা এমন এক আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হওয়ার আশঙ্কা করি যা হবে এমনকি আরও নিয়ন্ত্রিত।

প্রতিবেদনে গোয়েন লুইস বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সাথে বহু বছর ধরে জাতিসংঘ সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে। আমরা আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা রাখি। ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসইউন্নয়ন লক্ষ্যগুলো নিয়ে এগিয়ে চলা ও সেগুলো অর্জন করার পাশাপাশি ২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নতদেশের (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য নবোদ্যমে প্রয়াস চালানো আবশ্যক।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ