বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খন্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভান্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। ওয়েব সাইট সার্ভার রক্ষনাবেক্ষণ জটিলতার কারণে কিছু দিন বন্ধ ছিল। আবারও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে যাচ্ছে। ১ মার্চ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীনতার নেপথ্যে গণ মাধ্যমের ভূমিকা, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের।
আজ প্রকাশিত হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৫
আজকে আমরা দেখতে পাই, নিরপরাধ নিরীহ নিরস্ত্র জনগণের উপর যেভাবে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, দেখা মাত্র গুলি করছে, হাজার হাজার মানুষ আজকে মৃত্যুবরণ করছে তার নজির এ বিশ্বের ইতিহাসে নেই। তাই আমি সারা বিশ্ববাসীর কাছে আহবান জানাবো, বিশেষভাবে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিকট আহবান জানাবো, আপনারা এই নারকীয় হত্যাকান্ড দেখেও চুপ করে থাকবেন না। আসুন বিশ্ববাসী, সাড়ে সাত কোটি এই পূর্ব পাকিস্তানী ভাইদের বাঁচাবার জন্য আপনারা আমাদের সাহায্য করতে অগ্রসর হোন। বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাই- আপনারা মানবতার খাতিরে, মানুষকে বাঁচাবার তাগিদে, বাংলার জনগণের মুক্তির জন্য অগ্রসর হোন।হে বিশ্বের অধিবাসী তোমরা দেখ, কিভাবে পশ্চিমা এই গণবিরোধী শক্তি, এই শোষক শ্রেণীর প্রতিভূ পশ্চিম- এই সাম্রাজ্যবাদীদের দালালেরা পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করবার উদ্দেশ্যে কিভাবে তাদের নারকীয় হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।তাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের কাছে আহবান জানাই, আপনারা চুপ করে থাকবেন না, আসুন আমাদের সর্বপ্রকারে সাহায্য করুন।
বন্ধুগণ, আমি সারা বাংলার স্বাধীন বাংলার জনগণের কাছে আহবান জানাবো, বাঙালী ভাইয়েরা, আপনারা তুমুল সংগ্রামে নিজেদেরকে শরিক করুন এবং হানাদার দুশমনদের খতম করুন। যেখানে যে যে অবস্থায় আছেন, যার হাতে যে অস্ত্র আছে, সেই অস্ত্র তুলে নিন। মা-বোন, বাপ-ভাইয়েরা বসে থাকবেন না। রাস্তায় বের হন এবং সুবিধামত স্থানে অবস্থান করে শত্রুসেনাদের ঘায়েল করুন। মারাত্নকভাবে আঘাত হানুন। আঘাতের পর আঘাত হেনে বাংলাকে মুক্ত করুন। স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়বে এদিন আর সুদূরপরাহত নয়।
পরিশেষে আমি জনগণকে আহবান জানাবো, এই দেশ এই দেশের মহামান্য জননেতা, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণের দেবতা, বাংলার নয়নের মণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে পরিচালিত হবে- অন্য কোন কারো নির্দেশ বাঙালীরা কোন দিন বরদাশত্ করবে না এবং কোন মার্শাল ল’ বাঙালীরা মানে না। আমি আহবান জানাবো- বাংলার প্রতিটি নরনারী সকলের কাছে- আপনারা মার্শাল ল’ মানবেন না, মার্শাল ল’র কোন আইনই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা স্বাধীন বাংলার নাগরিক। স্বাধীন বাংলার মহান জননায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ আমাদের শিরোধার্য। জয় বাংলা। স্বাধীন বাংলা জয়।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র – পঞ্চম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৭-৮)
চলবে
পড়ুন আগের পর্ব :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-০১
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসিন হীরা