ঢাকা : জুলাই বিপ্লবের শহিদদের হত্যার বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাবে সরকার। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচারের জন্য যেভাবে পিছু ধাওয়া করেছিলেন, আমরাও শেখ হাসিনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে তাকে সেভাবে তাড়িয়ে বেড়াব। আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় কোনো শৈথিল্য আসবে না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার(৫ জানুয়ারি, ২০২৫) তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেছেন। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। আজ থেকে ঠিক ৫ মাস আগে ওইদিন ৭৭ বছর বয়সী এই স্বৈরশাসক দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
এ কথা উল্লেখ করে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘শেখ হানিাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি জুলাই বিপ্লবে নিহত ১,৫০০ ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের হত্যার জন্য জবাবদিহিতার মুখোমুখি না হন।’
প্রেস সচিব বলেন, ৫ মাস আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। সেই সাথে তার প্রায় ১৬ বছরের নিষ্ঠুর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের অবসান ঘটে। অকুতোভয় সাহসী ছাত্রদের নেতৃত্বে লাখ লাখ মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যান, যার ফলে ৭৭ বছর বয়সী স্বৈরশাসক এবং চোরতন্ত্র ও গুমতন্ত্রের রানি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
এরপর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সরকার দায়িত্ব নিয়েই দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনে। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয় প্রেস সচিব লিখেছেন, একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং রাষ্ট্র দেউলিয়া হওয়ার পরিস্থিতি এড়ানো গেছে। গত ৫ মাসে রপ্তানি উল্লেযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানিতেও বড়সড় উত্থান দেখা গেছে, যা বাড়তি অভ্যন্তরীণ চাহিদার ইঙ্গিত দেয়।
শফিকুল আলম আরও বলেন, হাতে মানুষের রক্তের দাগ লেগে থাকা শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের জন্য বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। রক্তের দাগ স্পষ্ট রয়েছে এমন বহু আওয়ামী লীগ নেতাকে ইতোমধে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও শত শত নেতা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ভার থেকে প্রত্যাবর্তন চেয়ে একটি নোট ভার্বাল পাঠানো হয়েছে। তবে, ভারতের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানি কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের গণহত্যা, হাজার হাজার মানুষ গুম, প্রায় ২৪০ বিলিয়ন ডলার মানি লন্ডারিং, ব্যাংক লুট এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্যও বিচারের মুখোমুখি করা হবে। প্রেস সচিব লিখেছেন, শেখ হাসিনা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচার করা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক কাজ উল্লেখ করে তিনি উল্লেখ করেন, হত্যা মামলায় ছাত্রলীগকে আমরা ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করেছি।
প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা তার লুকিয়ে থাকার জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলে চলেছেন। তার সমর্থকরা এখনও বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত: আমরা শেখ হাসিনাে সেইভাবে তাড়িয়ে বেড়াব যেভাবে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের তাড়িয়ে ফিরেছিলেন। এটি হবে নিরলস। আমাদের প্রচেষ্টয় কোনো শিথিলতা আসবে না।
কিছু লোক ‘সত্য ও সন্ধি’ নিয়ে কথা বলে। আমরাও পুনর্মিলন এবং ক্ষমা করায় বিশ্বাসী। তবে একটি দলের সঙ্গে তা করা কি সম্ভব, যাদের সদস্যরা এখনও সত্য অস্বীকার করছে? পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে, কিন্তু শেখ হাসিনা শেখ পরিবার বা তার দল কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি কোনো অনুশোচনা দেখায়নি বা দায় স্বীকার করেনি। বরং তারা মিথ্যার ফাঁদ পেতেছে। তারা ভারতীয় মিডিয়ায় মিথ্যা এবং অপতথ্য প্রচারের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে।
শফিকুল আলম বলেন, মানুষের রক্তের দাগ লেগে থাকা শেখ হাসিনা এবং দলের সদস্যদের হত্যা এবং দুর্নীতির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো মীমাংসা হবে না। কোনো পর্যায়ের লবিং হাসিনা এবং তার সহযোগীদের সাহায্য করতে পারবে না। পৃথিবী এগিয়ে গেছে। হাসিনার পৃথিবী সঙ্কুচিত হয়ে দিল্লির কয়েকটি ছোট কামরায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা যতই হাসিনার শাড়ির আঁচল ধরে রাখবেন, তারা দলের জন্য তত বড় কবর রচনা করবেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসার ক্ষীণ আশা জাগাতে হলে তাদের প্রথমে গণহত্যা, হত্যা, গুম এবং লুটপাটের জন্য হাসিনার নিন্দা করতে হবে। ছাত্ররা এবং জুলাই বিপ্লবের লাখ লাখ আন্দোলনকারী শেখ হাসিনা এবং শেখ পরিবারকে ইতিহাসের নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলেছে। এখন সাধারণ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পালা, তারা যেন ইতিহাসের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত ও রক্তপিপাসু শাসকের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়।