।।মনির ফয়সাল।।
কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৫৮তম স্থান অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। যেখানে ২০১৮ সালে ছিল ৬৪তম স্থানে। যা এক দশকে ৩০ ধাপ এগিয়েছে এই বন্দর। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিং এ গত বছরের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যাওয়ায় থ্রি মিলিয়ন ক্লাবের রেকর্ড থেকেও পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর। তবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমলেও বেড়েছে বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং।
এছাড়া ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৭৯টি জাহাজ কম এসেছে। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কম হওয়া ও জাহাজ কম আসার পেছনে করোনা মহামারীকেই দায়ী করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস(1 TEUS=One 20′ Container) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যেখানে গত বছর ২০১৯ সালের হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউসর। যা গত বছরের চেয়ে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউস কম।
জানুয়ারিতে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৭৯ টিইইউস, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯৪০, মার্চ মাসে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯, এপ্রিলে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯২১, মে মাসে ২ লাখ ৪ হাজার ৮০১, জুন মাসে ২ লাখ ১৯ হাজার ১৫০, জুলাই মাসে ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৩, আগস্ট মাসে ২ লাখ ৪১ হাজার ৮৬৭, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬২, অক্টোবর মাসে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৭, নভেম্বরে ২ লাখ ৫৮ হাজার ২২ ও ডিসেম্বর মাসে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৬ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিগত তিন বছরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ টিইইউস এবং ২০১৭ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৩ টিইইউস কন্টেইনার।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন। যেখানে ২০১৯ সালে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল। যা ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে।
জানুয়ারিতে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন, ফেব্রুয়ারিতে ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৯, মার্চ মাসে ১ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০২, এপ্রিলে ৭ লাখ ২৪ হাজার ২৫, মে মাসে ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫, জুন মাসে ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ২৪২, জুলাই মাসে ৭৪ লাখ ২৪ হাজার ৮৪৬, আগস্ট মাসে ৭৪ লাখ ৯৭ হাজার ১৬৬, সেপ্টেম্বরে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৭, অক্টোবর মাসে ৯২ লাখ ৩১ হাজার ১১৬, নভেম্বরে ৯৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৮ ও ডিসেম্বর মাসে ১ কোটি ৬ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।
বিগত তিন বছরের কার্গো হ্যান্ডলিং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন, ২০১৮ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ এবং ২০১৭ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৮ মেট্রিক টন।
এছাড়া ২০২০ সালে বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন। জানুয়ারিতে হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৩ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯ মেট্রিক টন, ফেব্রুয়ারিতে ৭২ লাখ ৬০ হাজার ৩৫২, মার্চ মাসে ৭৯ লাখ ৭৭ হাজার ৮৪৮, এপ্রিলে ৫৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৯, মে মাসে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮, জুন মাসে ৪৪ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৪, জুলাই মাসে ৫৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৭, আগস্ট মাসে ৫২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৯৭, সেপ্টেম্বরে ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৫, অক্টোবর মাসে ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৭৭২, নভেম্বরে ৭৫ লাখ ১ হাজার ২৭৩ ও ডিসেম্বর মাসে ৮০ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ হাজার ৭২৮ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। এর আগের বছর ২০১৯ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৮০৭টি জাহাজ। গত বছরের তুলনায় ৭৯টি জাহাজ কম হ্যান্ডলিং হয়েছে।
এ বছরের জানুয়াতি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় ৩৫৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৬৪টি, মার্চে ৩৬৬টি, এপ্রিলে ২৫৭টি, মে মাসে ২২৩টি, জুনে ২৩৭টি, জুলাই মাসে ২৯০টি, আগস্ট মাসে ২৭১টি, সেপ্টেম্বরে ৩১৮টি, অক্টোবরে ৩২৬টি, নভেম্বরে ৩৪৭টি ও ডিসেম্বর মাসে ৩৭২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়।
বিগত তিন বছরের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৮০৭টি, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৭৪৭টি এবং ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৩৭০টি জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি হয়, সেসব দেশে এখনও করোনার প্রকোপ বেশি। নতুন করে ইউরোপের অনেক দেশে লকডাউন শুরু হয়েছে, যার সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে। এতে বন্দরের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো, হ্যান্ডলিং, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, শিপ হ্যান্ডলিং ইত্যাদির প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে। করোনার কারণে সারা বিশ্বের বন্দরগুলো কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছিল। আমদানি-রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশও এর বাইরে ছিল না। যার কারণে তাদের আমদানি-রপ্তানি কমে গিয়েছিল। তার পরেও ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
তিনি বলেন, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যাওয়ার কারণে শীর্ষ বন্দরের তালিকায় পিছিয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ করোনা মহামারীর কারণে সব বন্দরের একই অবস্থা। বরং আগের বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বলেই আমাদের ধারণা।
বন্দর সচিব বলেন, দেশে করোনার কারণে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত লকডাউন ছিল। এসময় সব ধরনের কাজ প্রায় বন্ধ ছিল। তাই পণ্য আমদানি কম হওয়ায় বন্দরে জাহাজ কম ভিড়েছে।
বিএনএনিউজ২৪/এসজিএন