32 C
আবহাওয়া
২:২৭ অপরাহ্ণ - জুলাই ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » এমপি আনার হত্যা: মিন্টুকে মুক্ত করতে হাইকোর্টে রিটের প্রস্তুতি !

এমপি আনার হত্যা: মিন্টুকে মুক্ত করতে হাইকোর্টে রিটের প্রস্তুতি !


বিএনএ, ঢাকা: প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সাতজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জনই এমপি হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুধুমাত্র ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু জবানবন্দি দেননি।

YouTube player

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও তার কাছ থেকে জবানবন্দি নেননি। আনার হত্যাকাণ্ডের কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারী শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দির পরপরই আলোচনায় আসে মিন্টুর সম্পৃক্ততা। তদন্ত কর্মকর্তারা মিন্টু জড়িত থাকার বিষয়ে বেশকিছু তথ্য-প্রমাণও পান। এসব তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়েই ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু অজানা কারণেই ডিবি মিন্টুকে তিনদিন তাদের হেফাজতে রেখে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করে। আদালতও তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

কেনই বা তাকে রিমান্ড শেষ না হওয়ার আগেই আদালতে হাজির করা হলো সেই জট এখনও খোলেনি। এ নিয়ে ডিবি ব্যাখ্যাও দিয়েছে। ডিবি বলেছে, তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টুর কাছ থেকে হয়তো সন্তোষজনক উত্তর পেয়েছেন। তাই রিমান্ড দীর্ঘায়িত না করে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, রিমান্ডে মিন্টু তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। তাকে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ দেখালেও তিনি সেগুলো অস্বীকার করেন। তাছাড়া, মিন্টুকে আনার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করায় বিভিন্ন মহলের চাপ ছিল। রিমান্ডে যেন তাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করা হয়- এ রকম তদবিরও ছিল। এমনকি তাকে ছাড়ানোর জন্যও একটি মহল তৎপর ছিল। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মিন্টুকে রক্ষায় যে ক’জন রাজনৈতিকভাবে তদবির করেছেন তাদের মধ্যে স্বেছাসেবক দলের সাবেক এক শীর্ষ নেতা রয়েছেন। উচ্চ আদালতে রিট করে মিন্টুকে মুক্ত করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

মিন্টুর সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাত করেছেন তার বেশ কয়েকজন অনুসারি। মিন্টু তার অনুসারিদের চাপ সৃষ্টির অংশ হিসাবে ঝিনাইদহে প্রতিদিন মিছিল, সমাবেশ ও মানবন্ধন করে মাঠ দখলে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতার নির্দেশনা পেয়ে প্রতিদিন মিছিল মিটিং মানববন্ধন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এমন কি সংবাদ সম্মেলন করে মিন্টুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাফাই বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি মিন্টুকে হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত করে বক্তব্য প্রদানকারিদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছে।

এদিকে এমপি আনার হত্যা মামলায় সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল ও মোস্তাফিজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই দুইজনই আনারের দেহ থেকে মাংস ছাড়িয়ে টুকরা টুকরা করে। ফয়সাল ও মোস্তাফিজ জানিয়েছে, শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে তাদের যোগাযোগ হয়। শিমুল ভূঁইয়া তাদের বড় অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কলকাতায় যেতে বলে। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেটসহ সকল কাজ শিমুল ভূঁইয়া করে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। জরুরি পাসপোর্ট করার জন্য তাদের টাকাও দেওয়া হয়। ১৫ই এপ্রিল ফয়সাল খুলনা থেকে ঢাকায় এসে মামলার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বসুন্ধরার এল-ব্লকের ৩২ নং রোডের ১৯২৯ নং বাসায় ওঠে। পরদিন ১৬ এপ্রিল শাহীনের পিএস সিয়াম হোসেন দু’জনকে ভারতীয় ভিসার আবেদন কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তাদের পাসপোর্টের জন্য শাহীনই টাকা দিয়েছিল ।

শাহীনের তত্ত্বাবধানে তারা বসুন্ধরাস্থ বাসায় অবস্থান করে। এ সময় তাদের দেখা-শুনার দায়িত্বে ছিল সিয়াম। ফয়সালের ভারতীয় ভিসার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট তৈরি, রোগের প্রেসক্রিপশনসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য শাহীন প্রচুর টাকা খরচ করেছে বলে সিয়াম জানায়। ভারতীয় চিকিৎসা ভিসা পেয়ে ২৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে খুলনা ফিরে যায়। পরে শিমুল ভূঁইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনা মোতাবেক ফয়সাল ২রা মে কলকাতায় যায় এবং নিউমার্কেট এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেয়। মোস্তাফিজ ১০ মে কলকাতার নিউটাউনস্থ সঞ্জিবা গার্ডেন নামক বাসায় ওঠে। শাহীনের পরিকল্পনায় ভিকটিম আনোয়ারুল আজিম আনার ওই বাসায় গেলে শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জিহাদ, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আনারকে অজ্ঞান করে হত্যা করে এবং লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মৃতদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। আনারকে হত্যা করা হলে ফয়সাল ১৯শে মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং শাহীনের বসুন্ধরার বাসায় ওঠে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনোয়ারুল আজিম হত্যায় অংশ নেওয়া ৭ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩রা জুন আসামি শিলাস্তি রহমান, ৪ঠা জুন তানভীর ভূঁইয়া এবং ৫ই জুন শিমুল ভূঁইয়া, ১৪ই জুন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা এখন কারাগারে আছেন। ১৩ই জুন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তবে রিমান্ডে কিছু স্বীকার না করায় তাকে ৩ দিন পর কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে মামলার আলামত উদ্ধারে ২৪শে জুন গ্যাস বাবুকে আবারো ৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে ডিবি। আদালত তা নামঞ্জুর করেন। তবে গ্যাস বাবুর ফেলে দেওয়া ৩টি মুঠোফোন উদ্ধারে ডিবি পুলিশকে ঝিনাইদহে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করার অনুমতি দেন আদালত। যদিও ডিবি একদিন অভিযান চালিয়ে মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি।

ওদিকে, আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীনকে সহসাই ফেরানো যাচ্ছে না। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। এছাড়া ডিবি আমেরিকান দূতাবাসের সঙ্গেও শাহীনকে ফেরানোর বিষয়ে কথা বলেছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকাতে বাংলাদেশে শাহীনকে ফেরানোর সম্ভাবনা একেবারেই নাই। তবে আনার হত্যার ঘটনাস্থল কলকাতা। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে।

শুধু ভারত চাইলে শাহীনকে ফেরাতে পারবে। তবে সেটিও সময়সাপেক্ষ। কারণ শাহীন আমেরিকার পাসপোর্টধারী। অপরাধী হলেও তাকে সহজেই আমেরিকা ভারতের পুলিশের কাছে তুলে দিবে না। কারণ নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শাহীনের বিরুদ্ধে আগে অপরাধ প্রমাণিত হয়ে আদালতে রায়ে যদি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং আদালতের রায়ে যদি তার দণ্ড হয়, তবেই তাকে ফেরানো যাবে এমনটাই মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী 

Loading


শিরোনাম বিএনএ