বিএনএ,সাতকানিয়া(চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় রোগী দেখতে যাওয়ার পথে চিকিৎসককে ধরে জরিমানা করার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার (৪ জুলাই) এক আদেশে তাকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কেএম আল-আমীন এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, ‘সাতকানিয়ার ইউএনওকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তার স্থলে আপাতত দায়িত্ব পালন করবেন সাতকানিয়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) আল বরিশরু ইসলাম।’
এর আগে শুক্রবার ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়ার পথে পৌরসভার কলেজ রোড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওই চিকিৎসককে দন্ডবিধির ২৭০ এবং ২৭১ ধারায় জরিমানা করেন ইউএনও মো. নজরুল ইসলাম। সেসময় তিনি ওই চিকিৎসককে জরিমানার সঙ্গে জেল দেওয়ার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী চিকিৎসক। যদিও বিষয়টি সেসময় সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেন ইউএনও।
সে সময় ডা. ফরহাদ কবির সাংবাদিকদের জানান, আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। ওই সময় একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম। তখন সাতকানিয়া পৌরসভার কলেজ রোডের মুখে ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা হয়। এসময় ইউএনও’র সাথে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটর সাইকেল থামিয়ে আমার পরিচয় দেই।
ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘আপনারা লকডাউন দেয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আর এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না। এরপর ইউএনও’র সাথে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবিটি নিয়ে ফেলেন।’
ডা. ফরহাদ আরও জানান, ‘এক পর্যায়ে ইউএনও বলেন, ‘আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে’।কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে বের হয়েছেন এজন্য। তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া আসায় বিধি-নিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরও বেশি রাগান্বিত হয়ে যান ইউএনও।এসময় ইউএনও বলেন, ‘আমি চাইলে আপনাকে জেলে দিতে পারি। তা করলাম না, এক হাজার টাকা জরিমানা দেন।’ডাক্তার ফরহাদ কবির আরও জানান, অনেক লোকের সামনে তিনি ডাক্তারদের সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
এক পর্যায়ে মামলা লিখে আমার হাতে দিয়ে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন আমি টাকা দিয়ে দেই। এরপর ইউএনও বলেন, সাংবাদিকরা ছবি তোলেন, ডাক্তারকে যে জরিমানা করছি এটা পত্রিকায় দিতে হবে। পরে অনেকে মুঠোফোনে আমার ছবি তুলেছেন। জীবনে আমি কোনদিন এধরনের অপমান বোধ করিনি। আমি বুঝতে পারছি না একজন ইউএনও কিভাবে এমন খারাপ আচারণ করতে পারেন?’
ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, উনি যে ডাক্তার সেটাতো আমি বুঝতে পারিনি। উনার সাথে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং হেলমেট ছিল না। তিনি যে অন্যায় করেছেন সেটা নিজে বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমার অন্যায় হয়েছে। আমাকে শাস্তি দেন। পরে আমি এক হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আইন সবার জন্য সমান। সরকার আইন করেছে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি চাইলে আপীল করতে পারেন। মূলত সন্ধ্যা ৭টার পর পাওয়াতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকাতে জরিমানা করা হয়েছে।
শনিবার ঘটনাটি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন চট্টগ্রাম বিএমএ নেতারা। এ নিয়ে রোববার বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জনদের মধ্যে আলোচনাও হয়।
বিএনএনিউজ/ এসএমএনকে, এইচ.এম।