বিএনএ, ময়মনসিংহ: মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে পারেনি বাবা ইলিয়াস আলী, তাই তার আপন ভাতিজা মেয়ের দ্বিতীয় স্বামী ওমর ফারুক সৌরভকে (২৪) বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
রোববার (২ জুন) ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে ওমর ফারুক সৌরভের চারখন্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সৌরভ প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। চারখন্ড মরদেহ উদ্ধার নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে। পরে ওই দিন বিকেলে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। ঘটনার পরপরেই গা ঢাকা দেয় ইলিয়াস আলী ও তার পুরো পরিবার।
গতকাল রাতে সৌরভ হত্যায় জড়িত তার শ্বশুরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, ইসরাত জাহান ইভা ও ওমর ফারুক সৌরভ তারা দুইজন আপন চাচাতো ভাই বোন। গত তিন বছর আগে কানাডায় অধ্যয়নরত এক চিকিৎসক ছেলের সঙ্গে ইভার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইভাকে বাংলাদেশে রেখে তার স্বামী কানাডায় চলে যায়। ইভা তখন তার চাচাতো ভাই ওমর ফারুক সৌরভের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়, বিষয়টি উভয়ের পরিবার জানতো। গত ৯ মে ইভা ঢাকায় তার এক বান্ধবীর বাসায় সৌরভকে বিয়ে করে; সেই বিয়ে মেনে নেয়নি ইভার বাবা ইলিয়াস আলী। ক্ষুব্ধ বাবা ইভাকে ১৬ মে কানাডায় পাঠিয়ে দেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, গত শনিবার সৌরভ ইভার সাবেক স্বামীর বাবা চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের সাথে দেখা করতে ময়মনসিংহ আসেন। সৌরভ আমিনুল ইসলামের কাছে তার বিয়ের বিষয়টি খোলাসা করে সহযোগিতা চান। আমিনুল ইসলাম এই বিষয়টি ইলিয়াস আলীকে জানালে সে তার ছেলে মৃদুলকে দিয়ে সৌরভকে বাসায় ডাকে।
সৌরভ বাসায় গেলে ইলিয়াস আলী (৫৫) ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) প্রথমেই তাকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। এরপর চাপাতি দিয়ে চারখণ্ড করে দেহ।
পরে গাঙ্গিনারপাড় থেকে একটি নতুন লাগেজ কিনে সেই লাগেজে চার খন্ডিত দেহ ভরে নদীতে ফেলে দেয়। এই ঘটনায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ গতরাতে ফারুককে ঢাকা থেকে এবং ইলিয়াস আলীকে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া থেকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় সৌরভের দেহ বহনকারী প্রাইভেটকারসহ চালক আব্দুল হান্নানকেও (৬৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, সৌরভের পরিচয় যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে না পারে সে জন্য ইলিয়াস আলী সৌরভের হাতের আঙুল নষ্ট করে দেন। লাগেজ কেনার সূত্র ধরে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়েছে, তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে।
এ ঘটনায় নিহত সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী রোববার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত সোমবার রাতে পারিবারিক কবরস্থানে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের তারাটি গ্রামে সৌরভের দাফন সম্পন্ন করা হয়।
বিএনএনিউজ/ হামিমুর রহমান/ বিএম/এইচমুন্নী